অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন শুরু হতে তখনো বেশ দেরি। এ ফাঁকে মিরপুরের একডেমি মাঠে ঢুকেই ব্যাট-প্যাড নিয়ে অনুশীলনে নুরুল হাসান সোহান। অফ স্পিনার নাহিদুল ইসলামের হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া একটা বল মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারলেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক যে ভয়ডরহীন ক্রিকেটের কথা বলছিলেন, সেটার একটা মহড়া যেন আগে নিজেই করে নিলেন।
সাহসী ক্রিকেটের প্রতিশ্রুতি
দেশের ক্রিকেটে সোহানের পরিচয় সাহসী আর ইতিবাচক ক্রিকেট খেলায়। দলের মাঝেও এই ভয়ডরহীন ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই চেষ্টা করব যেন এটা করতে পারি। আগে থেকে ফল নিয়ে চিন্তা করলে অনেক সময় প্রক্রিয়া ঠিক থাকে না। আমার কাছে মনে হয়, ভয়ডরহীন থাকলে ইতিবাচক ব্যাপার ঘটার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।’
কাজটা অনেক কঠিন
শুরু থেকেই এই সংস্করণে খাবি খেয়ে আসছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিপক্ষে এই সংস্করণে ধবলধোলাই হয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে দলকে জয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই হবে সোহানের প্রথম চ্যালেঞ্জ। বাস্তবতা মেনেই তিনি বলছেন, ‘আমরা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ওয়ানডের তুলনায় পিছিয়ে আছি। এ সংস্করণে উন্নতি করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেটাই চেষ্টা করছি। এ কারণে ফলের চেয়ে প্রক্রিয়া ঠিক থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই চেষ্টা করব। এই সিরিজে দলগতভাবে খেলা আমার কাছে বড় কাজ বলে মনে হচ্ছে।’ দল নিয়ে বেশ আশাবাদী এই উইকেটকিপার ব্যাটার, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আসার পর নির্বাচকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাকে যখন জানানো হয় (অধিনায়ক), তখনো কথা হয়েছে। এখানে বিকল্প খুব একটা ছিলও না। যারা শেষ কয়েক বছর ধরে খেলছে, তারাই আছে। যে দল পেয়েছি, আমি খুশি।’
সিনিয়রদের ছাড়া পথচলা
নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদসহ এই সিরিজে সোহান পাচ্ছেন না সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমকে। তবে সিনিয়রদের না থাকাটা বড় সুযোগ হিসেবেও দেখছেন তিনি, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটে আমাদের সিনিয়র যাঁরা আছেন, তাঁদের অবদান এক-দুটি কথায় শেষ করা যাবে না। আমাদের কাছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এটা একটা সুযোগ। তাঁরা বাংলাদেশ দলকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছেন। আমরা যারা আছি বা খেলছি, তাদের দায়িত্ব পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া। এটা সবার জন্য সুযোগ। আমাদের দলগতভাবে ভালো খেলতে হবে।’ নতুন পথ চলায় সিনিয়রদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন সোহান। বললেন, ‘সাকিব ভাই, রিয়াদ ভাই, মুশফিক ভাই, তামিম ভাই এমনকি মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। অনেক দিন তাদের সঙ্গে খেলেছি, তাদের যে অভিজ্ঞতা আছে, এসব মিলিয়ে নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব।’
সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া
টেস্ট ও ওয়ানডেতে যতটা সুযোগ পেয়েছেন, দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন সোহান। তবে টি-টোয়েন্টিতে এখনো নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারেননি তিনি। অধিনায়কত্বের সঙ্গে এই সংস্করণে ব্যাটিংয়ে নিজেকে প্রমাণের চ্যালেঞ্জও থাকছে সোহানের। যেহেতু নিচের দিকে ব্যাটিং করেন, রানের চেয়েও প্রভাববিস্তারী ইনিংস খেলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তিনি, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমরা যারা মিডল বা লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করি, এখানে রানের চেয়ে স্ট্রাইক রেট বা ইমপ্যাক্ট গুরুত্বপূর্ণ। ১৫-২০ রানের ইনিংস ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু ওই ইনিংস খেলার ওপর কতটা ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে, সে চিন্তা থাকবে। যখন খেলোয়াড় হিসেবে খেলি, লক্ষ্য থাকে দল আমার কাছে কী চায় সেটা পূরণ করার। এই সিরিজে অধিনায়কত্ব করছি, আমার লক্ষ্য থাকবে দল হিসেবে কেমন খেলতে পারি, সেটা নিশ্চিত করা।’