কৌতূহলোদ্দীপক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবারের আজকের পত্রিকায়। সিলেট বিভাগে যাঁরা সরকারি দলের হয়ে নির্বাচন করেছেন, তাঁদের মধ্যে গত সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন পাঁচজন। সেই পাঁচজনের একজন নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন এবং বাকি চারজন জয়ী হলেও মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। সিলেট অঞ্চলে কী এমন ঘটল, যার কারণে মন্ত্রিত্ব হারালেন পাঁচজন ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ, তা নিয়ে আলোচনা করলেই হয়তো মন্ত্রিত্ব হারানোর সামগ্রিক পরিস্থিতিটা বোঝা যাবে।
আরও নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে, কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী আলোচনা থেকে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে উচ্চকিত হয়েছে তা হলো, মন্ত্রীদের সহকারী এবং স্বজনদের দাপট ছিল এলাকাগুলোয়। স্বাভাবিক উন্নয়ন কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাদ সেধেছেন এই সহকারী ও স্বজনেরা। দুজন মন্ত্রীর ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে, সাবেক শিবির নেতাদের তাঁরা একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। স্থানীয় নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্য থেকে কেন তাঁরা একজন এপিএস নিয়োগ দেননি, সে প্রশ্ন উঠলে তা হবে সংগত। আওয়ামী লীগে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা—তৃণমূল থেকে এ রকম অভিযোগ আছে দলটির মধ্যেই। মন্ত্রীদের এপিএস নিয়োগে এ বিষয়টিও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে এলাকায় নানা ধরনের সিন্ডিকেট করে এই এপিএসরা তাঁদের নিজস্ব লোকদের লাভবান করেছেন এবং তাঁদের কারণেই মন্ত্রীদ্বয় জনগণের আস্থা হারিয়েছেন। আরও একটি উচ্চকিত আলোচনায় ছিল স্বজনপ্রীতির ঘটনা।
এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সিলেট বিভাগের কম-বেশি সব মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। অস্বীকার করা যাবে না, নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্যরা ঘনিষ্ঠ কর্মীদেরই আস্থায় নিয়ে এলাকার কাজগুলো করেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরিবারের লোকজনেরা সরকারি কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। এপিএসের সঙ্গে একজন মন্ত্রীর স্ত্রীও প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যা রটেছে, তা নিশ্চয়ই হাওয়া থেকে ভেসে এসে মানুষের কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি। যা রটে, তার কিছু তো বটে। মন্ত্রীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগটি ভয়াবহ।
এরই সঙ্গে বলতে হচ্ছে মন্ত্রীর সন্তান ও স্বজনদের কথা। এক মন্ত্রীর সন্তান বাবার ক্ষমতার বলে পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, মন্ত্রীর ভাই ও ভাগনেরা পাহাড়ের জায়গা দখল করে বাংলো বানিয়েছেন, বনের গাছ সাবাড় করে করাতকল বানিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। আর এসব ব্যাপারে মদদ দেওয়ার কাজটি বিভিন্ন জায়গায় করেছেন মন্ত্রীর এপিএসরাই।
কাছের লোকেরাই কাজ করবেন, এটাই সত্য। এলাকার কাজ মানেই তো জনগণের সেবা করা। সেই কাজে যদি কাছের লোকেরা নিবেদিতপ্রাণ হন, তাহলে এলাকার জনগণও খুশি থাকে। কিন্তু কাজের বদলে প্রভাব বিস্তার, লুটপাট, আত্মসাৎ ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হলে তাঁরা মন্ত্রীর ভবিষ্যৎও যে ম্লান করে দিতে পারেন, এরই একটি খণ্ডিত চিত্র এই সিলেট বিভাগ। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা কি ভাববেন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মন্ত্রীরা?