বিষ প্রয়োগে অসাধু চক্রের মাছ শিকারের কারণে কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। মৎস্যভান্ডার হিসেবে প্রসিদ্ধ মিঠাপানির নদীটি প্রায় মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। নদীটির ওপর নির্ভরশীল পাঁচ শতাধিক জেলে পেশা হারিয়ে বেকার হয়েছেন। অনেকে পেশা বদল করে অন্য পেশায় জড়িয়েছেন।
জানা গেছে, মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা মাইভার পর্বত থেকে উৎপত্তি মাতামুহুরী নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৭ কিলোমিটার। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সর্পিলাকার নদীটি কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া এবং বান্দরবান জেলার আলীকদম ও লামা উপজেলা পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এ নদীতে এক দশক আগেও বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু আলীকদম ও লামা উপজেলায় তিন দশক ধরে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। ফলে পাহাড়ি ঢলে নদীতে পলি জমে গভীরতা কমেছে। নদীর জেগে ওঠা চরে চলছে তামাক চাষ। এ কারণে নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ আহরণ করার কারণে মাতামুহুরী নদীতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে।
চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি প্রবীণ সংবাদিক মাহমুদুর রহমান মাহমুদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে মাতামুহুরীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যায়। নদীর চরে তামাক চাষ ও বিষ প্রয়োগের কারণে নদীতে মাছের প্রজননে ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য নদী পরিকল্পিতভাবে খনন করতে হবে। বালু উত্তোলনও বন্ধ করা দরকার। এতে নদীতে আবার মাছের প্রজনন বাড়তে পারে।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীতে মাছের প্রজনন কমে যাওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে হবে। উজানের আলীকদম ও লামা উপজেলায় পাহাড় কাটা, পাথর উত্তোলন ও গাছ নিধনই নদী ভরাটের মূল কারণ। তামাক চাষ ও বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকারের ফলে নদীর মৎস্যভান্ডার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিষ প্রয়োগ বন্ধ করলে মাছের বংশবিস্তার বৃদ্ধি পাবে।’
চকরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফরহান তাজিম বলেন, ‘নদীটি অরক্ষিত। কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে নদী বঙ্গোপসাগরে মিশে গেছে।
রাতে বা ভোরে নদীতে বিষ প্রয়োগ অনেক চেষ্টার পরও চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। নদীতে জেলেরা আগের মতো মাছ পাচ্ছেন না, তাও ঠিক। বিষ প্রয়োগ কীভাবে বন্ধ করা যায়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’