১৯৬৯ সালে উপন্যাসটা লিখতে শুরু করেছিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। কিছুটা লিখে রেখে দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে লিখেছিলেন তার বড় একটা অংশ। ‘সংবাদ’ পত্রিকা ধারাবাহিকভাবে সেই উপন্যাস ছাপা শুরু করেছিল ‘চিলেকোঠায়’ নামে। উপন্যাস হিসেবে যেটা পরে বের হয়, তাতে প্রথমে ছিল একটা স্বপ্ন। কিন্তু পত্রিকায় বের হওয়ার সময় তালেব নামের একটি ছেলের আত্মহত্যা দিয়ে শুরু হয়েছিল উপন্যাসটি। আবার উপন্যাস হয়ে বের হওয়ার সময় দেখা যায়, সে তালেব আত্মহত্যা করেনি, গুলি খেয়ে মরেছে। তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল উপন্যাসটা।
গোল বাধল ইতিহাসের পালাবদলের সময়টায়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে ক্ষমতায় এল খন্দকার মোশতাক গং। নতুন যে সরকার এসেছে, সেটি ছিল পাকিস্তানপন্থী। এ রকম ধারণার কারণে সংবাদ উপন্যাসটি নিয়ে বিপদে পড়ল। ইলিয়াস তাঁর উপন্যাসে পাকিস্তান নিয়ে অনেক ঠাট্টা করেছেন। একজন বেসিক ডেমোক্র্যাট বা মৌলিক গণতন্ত্রীকে উপন্যাসের চরিত্র করেছেন রহমতুল্লাহ নামে। সে মাঝে মাঝে জিন্নাহ টুপি পরত। সংবাদ যখন সেটা ছাপল, তখন বেসিক ডেমোক্র্যাট, পাকিস্তান, জিন্নাহ শব্দগুলো বেমালুমভাবে বাদ দিয়ে দিল।
প্রতিবাদ করলেন ইলিয়াস। না জানিয়ে লেখকের উপন্যাস থেকে শব্দ বাদ দেওয়ার তো কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই পরিবর্তনগুলো না করে উপন্যাসটি ছাপতে পারবে না বলে জানিয়ে দিল সংবাদ। আর এক কিস্তি ছেপে ছাপা বন্ধ করে দিল তারা। ইলিয়াস বললেন, ‘পাঠকেরা ভাববে, এটা লেখকের দায়িত্বহীনতা। আপনারা যে ছাপতে পারছেন না, সেটা পাঠককে জানিয়ে দিন।’
সংবাদ সেটা লিখে দিয়েছিল।
এরপর আবার অনেক দিন লেখা বন্ধ ছিল। পরে সাপ্তাহিক রোববারে পুনরায় ছাপা শুরু হলো উপন্যাসটি। রফিক আজাদ খুব সহযোগিতা করলেন। বই হিসেবে যখন বের হলো, তখন সার্কাস্টিক করে উপন্যাসটির নাম রাখা হলো ‘চিলেকোঠার সেপাই’। ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে সে বই প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন নাইম হাসান।
সূত্র: শাহাদুজ্জামান, কথাপরম্পরা, পৃষ্ঠা ৯৮-৯৯