সালমা সোবহান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী ব্যারিস্টার। শিক্ষক, আইনবিদ, গবেষক, সমাজকর্মী, কতই না পরিচয় তাঁর। তবে মানবাধিকারকর্মী হিসেবে তাঁর মূল পরিচয় গড়ে উঠেছিল। অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারে তাঁর জন্ম; কিন্তু তাঁর মতো আধুনিক ও প্রগতিশীল মানুষ আমাদের সমাজে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
সালমার বাবা মো. ইকরামুল্লাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন। মা শায়েস্তা ইকরামুল্লাহও মরক্কোয় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
সালমা সোবহান ১৯৯৩ সালে একবার ভিয়েনায় যাচ্ছেন মানবাধিকারবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে। সঙ্গে যাচ্ছেন সুলতানা কামাল। বাবরি মসজিদ-পরবর্তী সময়ে তখন সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা চলছিল। ফলে মুম্বাই থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট সময়মতো টেকঅফ করেনি। লন্ডনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যায়। সেখান থেকে ভিয়েনার ফ্লাইট সন্ধ্যায়। সালমা সোবহান জিজ্ঞেস করলেন সুলতানা কামালকে, ‘এখানে কি তোমার কোনো কাজ আছে?’
‘না।’ ‘তাহলে চলো আমার সঙ্গে।’
এরপর এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে একবার যেন গাড়ি খুঁজলেন। কোনো গাড়ি নেই দেখে চড়ে বসলেন বাসে। ভিয়েনা সম্মেলনে কী নিয়ে আলোচনা হবে, সে বিষয়ে কথা বললেন দুজন। বাস থেকে নামলেন লন্ডনের এক সম্ভ্রান্ত এলাকায়।
একটি বিশাল বাড়ির দরজার বেল চাপতেই বেরিয়ে এলেন এক তন্বী নারী। ওই নারী সালমা সোবহানকে দেখেই ইংরেজিতে বললেন, ‘বাজি, তুমি কোথায় ছিলে? ড্রাইভার তোমাকে না পেয়ে চলে এল?’
সুলতানাকে নারীটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন সালমা সোবহান, ‘সুলতানা, আমার বোন সারওয়াত, প্রিন্সেস সারওয়াত।’ সারওয়াত তখন জর্ডানের তদানীন্তন যুবরাজের স্ত্রী, অর্থাৎ ভাবী রানি।
আর সারওয়াতকে বললেন, ‘ও সুলতানা।’
গাড়ির ড্রাইভার অপেক্ষা করেনি বলে তাঁকে নিন্দা-মন্দ করেননি তিনি। নিজেকে ভিআইপি মনে করতেন না তিনি কখনোই। তাই তো জর্ডানের যুবরাজের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য অবলীলায় বাসে করে চলে আসতে পেরেছেন মর্যাদার কথা না ভেবে।
সূত্র: সুলতানা কামাল, সালমা সোবহান, পৃষ্ঠা ৬০-৬১