অগ্রহায়ণ মাস চলে এসেছে। তার সঙ্গে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটার মৌসুম। নতুন ধান ঘরে তোলার এ সময়ই গ্রামবাংলায় শুরু হয় নবান্ন উৎসব। নতুন ধানের চাল দিয়ে প্রথম রান্না ও পরিবারের সবাই একসঙ্গে তা খাওয়াই হলো নবান্ন উৎসব। ঢেঁকিতে ভানা নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে বানানো পিঠাপুলিও থাকে এই আয়োজনে। তবে বগুড়া আর জয়পুরহাটে নবান্ন উৎসবে কেবল পিঠা-পুলিই থাকে না, বসে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলাও। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও জয়পুরহাটের কালাইয়ে বসেছে এই মেলা। এবারের মেলায় রুই আর কাতলার রাজত্বই বেশি। তবে চিতল, বোয়ালসহ অন্যান্য মাছের উপস্থিতিও রয়েছে।
বগুড়ার নন্দীগ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নবান্ন উপলক্ষে বিভিন্ন হাটবাজারে বসেছে মাছের মেলা। উপজেলার রণবাঘা ও ওমরপুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাছের মেলায় সারি সারি দোকানে থরে থরে
সাজানো রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, আইড়, বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ। লোকজন ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন এসব মাছ।
মাছ বিক্রেতা মিন্টু মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাছের মেলায় বাজারে বড় বড় মাছ এনেছি। এসব মাছের মধ্যে বড় রুই ও কাতলাও আছে।’ আরেক দোকানি মোস্তফা আলম বলেন, মাছের আকার ভেদে বিভিন্ন দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। রুই ও কাতলা ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার নাগরকান্দি গ্রামের মাছ ক্রেতা উত্তম কুমার সরকার জানান, তিনি কাতলা ও রুই কিনেছেন। দুটোই ৩৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, এবারের মাছের মেলায় চিতল, আইড় ও বোয়াল মাছের উপস্থিতি তেমন নেই।
এদিকে জয়পুরহাটের কালাইয়ের পাঁচশিরায়ও জমে উঠেছে মাছের মেলা। উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সহযোগিতায় স্থানীয় মৎস্যচাষি ও আড়তদারদের উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো না ফুটতেই মেলায় ক্রেতাদের ভিড়। বিভিন্ন আকারের হরেক রকমের মাছের পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বগুড়ার আদমদীঘি থেকে ঐতিহ্যবাহী এই মাছের মেলায় মাছ কিনতে এসেছিলেন বিপ্লব হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই মেলার নাম অনেক শুনেছি। ঐতিহ্যবাহী এই মাছের মেলায় এসে ৩৫ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ৪২ হাজার ৬০০ টাকায় কিনেছি।’ আরেক ক্রেতা মিঠু ফকির বলেন, মাছের মেলা থেকে তিনি ১৩ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১৩ হাজার টাকায় কিনেছেন।
মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, এই মেলায় বড় আকারের কাতলা মাছ ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে ও ১০ কেজির রুই ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় কেবল ক্রেতা-বিক্রেতারাই নন, অনেক দর্শনার্থীও ভিড় করছেন। এমনই এক দর্শনার্থী রকি হোসেন। তিনি বলেন, ‘মেলায় এসেছি। গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম বেশি দেখতে পাচ্ছি।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে প্রতিবছরের মতো এবারও ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা বসেছে। মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বড় আকারের মাছ বিক্রি হচ্ছে। এমন আয়োজন অনেক দিক থেকেই ইতিবাচক। কারণ এর মাধ্যমে অনেকে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন।