স্বাধীনতার ২০ বছর পর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার হাল নিয়ে প্রশ্ন জেগে উঠেছিল কারও কারও মনে। তাঁদের একজন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাসরত ড. নুরুন নবী। তাঁরই উদ্যোগে একটি বই প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যাঁরা বাংলাদেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী, তাঁদের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ করে তৈরি হবে সে বই। এ কাজে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি তখন নিউজার্সিতেই বসবাস করছিলেন। জাফর ইকবালই হবেন বইটির সম্পাদক। তিনিই বইটির নাম নির্ধারণ করলেন, ‘বিশ বছর পর’।
অনেককেই ফোন করা হলো। কেউ কেউ লেখা পাঠাতে শুরু করেছেন। শহীদজননী জাহানারা ইমামকেও চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি সে চিঠি পাননি। ফলে টেলিফোনে কথা হওয়ার পরপরই তিনি লেখা পাঠিয়ে দিলেন। লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘বিশ বছরের বিষ-বাষ্প’।
সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা টাইপ করা ছিল খুব সমস্যার কাজ। যে পত্রিকাগুলো বের হতো, সেখানে নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক মানুষ টাইপ করতে জানতেন। ড. জাফর ইকবাল পুরো বইটি বাংলায় টাইপ বা কম্পোজ করার দায়িত্ব নিলেন কাঁধে। নিজের আবিষ্কৃত বাংলা ফন্ট দিয়ে তিনি টাইপ করে চললেন।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের সঙ্গে আরও একজন মানুষ বইটি কম্পোজ করেছিলেন। তিনি হলেন জাফর ইকবালের মা আয়েশা ফয়েজ। তিনি সে সময় নিউজার্সিতে ছেলের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। কীভাবে তিনি কম্পোজ করা শিখলেন, সে কৌতূহল হলো ড. নুরুন নবীর। এবং শোনা গেল এক করুণ কাহিনি।
আয়েশা ফয়েজের স্বামী ফয়জুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। তিন ছেলে, তিন মেয়ে নিয়ে আয়েশা ফয়েজ অকূলপাথারে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি দ্রুত বাংলা টাইপ শিখে নেন। সেই দুর্দিনে বাংলা টাইপ করে কিছু আয় করার সুযোগ হয়।
সেই অভিজ্ঞতাই কাজে লাগিয়ে আয়েশা ফয়েজ বইয়ের কিছু অংশ কম্পোজ করে দেন।
সূত্র: ড. নুরুন নবী, আমেরিকায় জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি, পৃষ্ঠা ৪৭-৫১