১৯৯৪ সালের ৩০ অক্টোবর কল্যাণীতে কবীর সুমনের একক অনুষ্ঠান। সে সময় সুমনের বাবার শেষ সময়। অচৈতন্য তিনি। অক্সিজেন চলছে। বাঁচবেন না। সুমনের মনে প্রশ্ন: যদি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন, তাহলে গোলমাল হতে পারে। হতে পারে ভাঙচুর। কী করা যায়?
বাবা ছিলেন বন্ধুর মতো। সব ব্যাপারেই তাঁর সঙ্গে আলাপ করা যেত। এখন তিনি চলে যাচ্ছেন। সেদিন একটু বেলায় ভবানীপুরের বাড়িতে এলেন সুমন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান। দিন দুই রেওয়াজ করা হয়নি। খাওয়ার আগে রেওয়াজে বসেছেন আর বাবার কথা ভাবছেন। লিখছেন গান, ‘তুমি তো চললে/ সক্কলে যায়/ থাকতে এসেছে, ভাবতে ভাবতে/ সবাই পালায়। রেওয়াজ শেষে খেতে বসার সময় ফোন এল। ‘সব শেষ।’ বাবা মারা গেছেন।
১৯৯১ সাল থেকেই মায়ের রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস। শয্যাশায়ী তিনি। মায়ের ঘরে ঢুকলেন সুমন। মা একটু কেঁদে উঠতেই কড়া ধমক দিলেন সুমন। বললেন, ‘কাঁদছ কেন, বাবার সঙ্গে এবার কাটুম আর টুকাইয়ের দেখা হবে। কাঁদবে না একদম। বরং আমরা বাবাকে বলি, হ্যাপি জার্নি।’
চোখের জল নিয়েই হেসে ফেললেন মা। এবার সুমন বলল, ‘বিকেল হয়ে আসছে। ছটায় কল্যাণীতে একক অনুষ্ঠান। বাবার একক যাত্রা অন্যদিকে। সুমন মায়ের চোখে চোখ রেখে বললেন, ‘আমি কি অনুষ্ঠানে যেতে পারি?’
মা আগে থেকেই অনুষ্ঠানের কথা জানতেন। তিনি বললেন ‘যা, গান গেয়ে আয়। তোর বাবাকে জিজ্ঞেস করলেও এটাই বলতেন। কিছু ভাবিস না, তুই তোর কাজ করে আয়।’
বাবা শুয়ে আছেন পরম শান্তিতে। বাবার কাছ থেকে বিদায় নিলেন সুমন। অনুষ্ঠান শেষে বাবার শেষ সময়ে আবার উপস্থিত হতে হবে। কল্যাণীতে ঠিক সময়ে পৌঁছে গেলেন। একটানা আড়াই ঘণ্টা গান করলেন। কোনোবিরতি নিলেন না। গান শেষে ঝড়ের বেগে গাড়ি চালাল আশীষ। পৌঁছে দিল ক্যাওড়াতলা শ্মশানে।
সূত্র: কবীর সুমন, আলখাল্লা, পৃষ্ঠা ৪১-৪৩