অন্য শরণার্থীদের মতোই ১৯৭১ সালে কলকাতায় অনিশ্চিত জীবন কাটছিল কবরীর। ঢাকার ডাকসাইটে চিত্রনায়িকা তিনি, কিন্তু ভারতে তাঁকে কাটাতে হচ্ছে দুর্বিষহ এক জীবন। এ রকম একসময় বোম্বে থেকে ‘জয় বাংলা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ডাক আসে। পরিচালনা করবেন আই এস জোহর। ২০ হাজার টাকা সম্মানী। বাংলাদেশ সরকারের হাইকমিশনের অনুমতি মিলল। পারিশ্রমিকের অর্ধেক ১০ হাজার রুপি দেওয়া হলো মুক্তিযোদ্ধাদের তহবিলে। হিলটপ হোটেলে হয় থাকার বন্দোবস্ত।
যদিও ছবিতে নায়িকা হওয়ার কথা ছিল কবরীর, কিন্তু দেখা গেল ওদের দিক থেকেই নেওয়া হয়েছে নায়ক-নায়িকা। কবরী অভিনয় করলেন একটি কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।
ছবিটিতে মুক্তিযুদ্ধ ভালোভাবে ফুটে ওঠেনি।
বোম্বেতে ঠিকভাবে খাওয়া জোটে না। কখনো কেউ এসে অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। সেখানেই দেখা হলো সলিল চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁর দুই কন্যার সঙ্গেও ভাব হলো। কবরীকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে সলিল চৌধুরী ভাবলেন। মেগাফোন কোম্পানি সলিল চৌধুরীর লেখা ও সংগীতে ৪৫ ফরম্যাটে একটি রেকর্ড বের করে।
প্রথমে তিনি সুচিত্রা সেনকে দিয়ে করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি নিলেন কবরীকে। শিরোনাম দেন ‘আমি মুজিদের মা বলছি’। স্ক্রিপ্টজুড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা, অত্যাচার, নির্যাতন উঠে আসে। এই স্ক্রিপ্টে অভিনয় করতে হয়নি, উদ্গত আবেগ এমনিতেই একাকার করে দিচ্ছিল কবরীকে।
এরপর বড় এক হোটেলে একটি অনুষ্ঠান হাতে নেন সলিল চৌধুরী। বলরুমে সম্মানিত অতিথিদের চায়ের নিমন্ত্রণ। কবরী পড়বেন বলে একটা কবিতা লেখেন তিনি। ভাঁট ফুলের ডাঁটা দিয়ে অস্ত্র বানানোর কথা ছিল সে কবিতায়। অনুষ্ঠানে সেই কবিতা পড়তে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কবরী। সলিল চৌধুরী তাঁকে জড়িয়ে ধরে প্রবোধ দেন।
এরপর কাঁদতে কাঁদতে শাড়ির আঁচল পেতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাহায্য চাইলেন কবরী। সলিল চৌধুরীই বুঝিয়েছেন, ত্যাগ আর কষ্টের মধ্যে কীভাবে ভালোবাসা জন্মায়।
সূত্র: কবরী, স্মৃতিটুকু থাক, পৃষ্ঠা ৭৩-৮২