ড. মুহম্মদ শহীদুল্লার ছেলে মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি একটা মিছিলের সঙ্গে তোপখানা রোডের গেট দিয়ে সেক্রেটারিয়েটে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশের নেতৃত্বে ছিলেন আইজি মি. গফুর। ছাত্ররা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারছিল। মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ ইটপাটকেল না পেয়ে আইজি গফুরের দিকে একটা মরা গরুর মাথা ছুড়ে মারেন।
১৯৪৯ সালের মার্চে কমরেড তোয়াহা, শহীদুল্লা কায়সার, আজিম আর তকীয়ূল্লাহ গিয়েছিলেন ঢাকেশ্বরী কটন মিলে। উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিকদের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের চেতনা জাগিয়ে তোলা। রাত ১০টা পর্যন্ত শ্রমিকদের সঙ্গে মিটিং চলে। মিটিং শেষে মিলের ম্যানেজার বললেন, ‘রাত হয়েছে, আপনারা লঞ্চে চলে যান।’
শ্রমিকেরা মানা করলেন। বললেন, আপনারা লঞ্চে যাবেন না। মিল কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
তকীয়ূল্লাহরা ভাবলেন, মালিকের সঙ্গে সদ্ভাব নেই বলেই হয়তো শ্রমিকেরা এ কথা বলছেন। লঞ্চে ওঠার জন্য যখন ঘাটে গেলেন, তাঁরা দেখলেন থানার দারোগা সেখানে হাজির।
‘হ্যান্ডস আপ!’ বলল পুলিশ। তকীয়ূল্লাহর পকেটে বৈঠকের রেজল্যুশন লেখা কাগজপত্র ছিল। তিনি সেগুলো ফেলে দিলেন পানিতে। সেটা দেখে দারোগা কষে চড় মারলেন তকীয়ূল্লাহর গালে। কাগজ ততক্ষণে ভেসে গেছে।
থানায় নিয়ে সাতজনকে হাতকড়া বেঁধে রেখে দেওয়া হলো। দারোগা সাহেব রাতে খাবারের ব্যবস্থা করলেন এবং রাতে খেলার জন্য তাস এনে দিলেন।
সকালে এসডিপিও সাহেব এসে দেখলেন হাতকড়া পরা অবস্থায় রয়েছে তাঁর বন্ধুর ছেলে সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম। তিনি বললেন, ‘তুমি এখানে এলে কী করে?’
‘আমরা রাষ্ট্রভাষা নিয়ে শ্রমিকদের কাছে গিয়েছিলাম।’
এসডিপিও সাহেব খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘যা, বাসায় যা, মুরগি জবাই করতে বল। পরোটা তৈরি করে যেন। এদের সবাইকে খাওয়াতে হবে।’
সরকারি কর্মচারীদের মধ্যেও বাংলা ভাষাপ্রীতি যথেষ্ট ছিল।
সূত্র: মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ, একুশের সংকলন, স্মৃতিচারণা, পৃষ্ঠা ৩৩-৩৫