নাম ধরে ডাকলে যেসব শিশু সাড়া দিত না, সমবয়সীদের সঙ্গে মিশত না, অস্বাভাবিক আচরণ করত; তারা এখন রং চিনতে পারে, সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলা করে। ছবি আঁকে। অটিস্টিক শিশুদের পরিবর্তনের এমন চিত্র দেখা গেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার চাঁদনগরের ইউনিক গিফট ফাউন্ডেশনে।
ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুরের সন্তান তৌহিদা সুলতানা ২০১৪ সালে ঢাকার বসুন্ধরায় অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি সৈয়দপুরে এর শাখা খোলেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এখানে শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব শিক্ষার্থী এখন আর পরিবারের বোঝা নয়।
ফাউন্ডেশনে ১৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাঁরা শিশুদের হাতেকলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৯ জন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পেছনে প্রতিষ্ঠান থেকে মাসে ৮ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়।
ইউনিক গিফট ফাউন্ডেশনের ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষে অবস্থান করছে অটিজম আক্রান্ত শিশুরা। তাদের পরিচর্যায় নিয়োজিত আছেন একাধিক শিক্ষক। মায়ের আদরে তাদের আগলে রেখেছেন শিক্ষকেরা। শিশুদের সঙ্গে খেলছেন, হাসছেন, তাদের বিভিন্ন আবদার মেটাচ্ছেন তাঁরা। পাশের একটি কক্ষে অপেক্ষা করছেন অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের দুই চোখেও কিছুটা প্রশান্তির ছাপ।
শিক্ষার্থী রুজদার বাবা শামীম হোসেন ও ইমরান হোসেনের মা শাহনাজ পারভীন জানান, তাঁদের সন্তানেরা যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, তখন তাঁরা বুঝতে পারেন সন্তান অটিজমে আক্রান্ত। এখন তারা অনেকটা স্বাভাবিক আচরণ করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ন রশিদ বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর ১৫ দিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর তাঁর জন্য একক শিক্ষাপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে শিশুদের আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ানো। এখানে ভর্তি হওয়ার পর অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছে। অনেকে এখন শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে অন্য স্বাভাবিক শিশুদের সহপাঠী হয়ে পড়ালেখা করছে।’
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তৌহিদা সুলতানা রুনু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সমাজের একজন হিসেবে আমার দায়িত্ব রয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে শিশুরা। ভবিষ্যতে চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জে এ ধরনের স্কুল খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।’