যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই কোল ঘেঁষে ঝিকরগাছার গদখালীতে গড়ে ওঠা শান্ত গ্রাম নবীবনগর। এটি জেলা শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মাত্র সাতটি পরিবারের বাসের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা গ্রামটির সবাই বৃহত্তর কুমিল্লা (বর্তমান চাঁদপুর) জেলার মানুষ।
যশোর অঞ্চলে বসবাসের চার প্রজন্ম পেরিয়ে গেলেও এ গ্রামের মানুষেরা বাপ-দাদার কুমিল্লা অঞ্চলের সেই ভাষা, আচার-আচরণ ধরে রেখেছেন। তবে গ্রামের বাইরে সবাই যশোরের ভাষা ও সংস্কৃতিতে মশগুল থাকেন।
১৯৪৭ সালে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা থেকে গদখালীতে এসে যে কজন প্রথম বসতি গড়েছিলেন তার মধ্যে হাজী আবুল হোসেন মাস্টার, কায়েস উদ্দীন মুন্সী, মৌলভি তোফাজ্জেল হোসেন, কানাই দেওয়ান, ইদ্রিস আলী প্রধানিয়া ও মহি মিয়াজীসহ সাত পরিবার। এসব ব্যক্তির কেউ এখন বেঁচে নেই। তবে তাঁদের প্রজন্ম পরম্পরায় সন্তান, নাতি–নাতনিসহ বহু স্বজন এখানে বাস করছেন।
এসব পরিবার পদ্মার ভাঙনে পড়ে ১৯২০ সালে বর্তমান চাঁদপুর (তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লা) জেলা থেকে তৎকালীন বৃহত্তর যশোরের বনগাঁ মহকুমা (বর্তমান ভারতের পশ্চিম বাংলার উত্তর ২৪ পরগনা থানা) এলাকায় বসতি গড়েছিলেন।
প্রয়াত হাজী আবুল হোসেন মাস্টারের ছেলে আব্দুর রশিদের বয়স এখন চুরাশি। তিনি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনের পর তাঁরা বনগাঁ থেকে যশোর সদরের হাওলি গ্রামে আসেন। সেখান থেকে তাঁর বাবা গদখালীর এ মৌজায় বসতি করেন। তখন এ অঞ্চল ফাঁকা ও উঁচু জায়গা ছিল। এর পর বৃহত্তর কুমিল্লা থেকে অন্যরাও এসে এখানে বসতি শুরু করেন।
১৯৫২ সালে যশোরের জেলা প্রশাসক ছিলেন নবীব আলী চৌধুরী। তাঁর বাড়ি ছিল তৎকালীন কুমিল্লা জেলার (বর্তমানে চাঁদপুর) মতলব থানায়। তিনি খোঁজ পান ঝিকরগাছার গদখালীতে তাঁর নিজ জেলার বেশ কিছু লোক আছেন।
সেই সূত্র ধরে জেলা প্রশাসক নবীব আলী চৌধুরী একদিন শুক্রবার সেখানে দুটি সাইনবোর্ড নিয়ে আসেন। সেই সাইনবোর্ডে নিজের নাম অনুসারে ‘নবীবনগর’ লেখা ছিল।
তিনি ঘোষণা দিয়ে যান, তাঁর নামানুসারে এই স্থানের নাম হবে নবীবনগর। সেই থেকে গ্রামটির নাম নবীবনগরই রয়েছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৪০০টি পরিবারের বাস।