অনেকেই মনে করে থাকেন, ছবি বানিয়ে সত্যজিৎ রায় অগাধ টাকাপয়সার মালিক হয়েছেন। আসলে বছরে একটি বা দুটি ছবি করতেন তিনি। তাতে সংসার চলত না।
খুবই গোছালো পরিচালক ছিলেন তিনি। কস্টিউম, ক্যামেরা, সংলাপ, সংগীতের কাজ করতেন একহাতে। যাঁরা তাঁর সঙ্গে কাজ করত, তারা সহজেই বুঝতে পারত তিনি কী চাইছেন। নিজের কাহিনী নিয়ে মোট সাতটি ছবি করেছিলেন তিনি। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘নায়ক’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘শাখা প্রশাখা’ আর ‘আগন্তুক’। আর স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘পিকু’। এত কাজ করতেন, কিন্তু প্রযোজকের কাছ থেকে টাকা নিতেন শুধু পরিচালনার জন্য। বিজয়া রায় তাতে অধৈর্য হয়ে একবার বললেন, ‘অন্তত মিউজিকের জন্য তোমার টাকা নেওয়া উচিত। অন্য কেউ মিউজিক করলে তো প্রযোজক টাকা দিতেন।’
সত্যজিৎ বললেন, ‘দ্যাখো, আমাদের পশ্চিম বাংলায় ছবির জগৎ কতটুকুন, জানো? আমার প্রধান উদ্দেশ্য, প্রডিউসার যেন মার না খান। আমি পরিচালনার জন্য যে টাকা নিই, এর চেয়ে বেশি টাকা আমি নিতে পারব না। আমার বিবেকে বাধবে।’ তারপর বিজয়াকে বললেন, ‘কেন, তোমার কি সংসার চালাতে অসুবিধা হচ্ছে?’
বিজয়া বললেন, ‘না, তা নয়। যা রোজগার, তার সবই খরচ হয়ে যায়। একটা বাড়ি নেই, জমি নেই, ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে তো! ছেলে আছে, তার জন্য কিছু রাখতে হবে তো!’
সত্যজিৎ বললেন, ‘না। আমি যেমন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি, বাবুও পারবে।’
আসলে সংসার চালানোর টাকা সিনেমা বানিয়ে উঠে আসত না। আসত গল্পের বই থেকে। সিনেমা থেকে পাওয়া টাকার সঙ্গে বইয়ের টাকা যোগ না হলে পথে বসতে হতো সত্যজিৎকে।
একবার পায়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ছয় মাস কাজ করতে পারেননি। বিজয়ার মাথায় হাত। ঠিক সে সময় ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন, সে টাকার বদৌলতে নির্বিঘ্নে কেটে গেল কয়েকটা মাস!
সূত্র: বিজয়া রায়, আমাদের কথা, পৃষ্ঠা ২৪৩-২৪৪