ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় শহররক্ষা বাঁধ প্রকল্পের পাশ থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীণ নদীভাঙন রোধ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ডাম্পিং ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
তবে অভিযুক্তদের দাবি, নিজেদের জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছেন তাঁরা। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামের মোস্তফা ও সামসুদ্দিন দেওয়ান, সাত্তার সুমন শহররক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক প্রকল্প এলাকা থেকে শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে ভাটায় বিক্রি করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের বেতুয়া লঞ্চঘাট থেকে সামরাজ মৎস্যঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহররক্ষা বাঁধের জন্য সিসি ব্লক, জিও ব্যাগ ড্রেজিং প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা ও সামসুদ্দিন দেওয়ান, সাত্তার সুমনসহ কয়েকজন ব্যক্তি একত্রে নির্মাণাধীন বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে স্থানীয় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন। প্রতি ট্রাক মাটি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি কাটায় বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মাটি কাটার শ্রমিক জাহের জানান, স্থানীয় মোস্তফা বাঁধের সিসি ব্লকসংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এই মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রাকপ্রতি শ্রমিকেরা পাচ্ছেন ৩৫০ টাকা। এর বাইরে আর কিছু জানি না।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা বলেন, নদীভাঙনে আগের শহররক্ষা বাঁধটি বিলীন হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে নদীরক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় সিসি ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। ওই প্রকল্পের পাশে আমাদের জমি রয়েছে। সেই জমি থেকে নিজেদের প্রয়োজনে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতি ট্রাক মাটি বিক্রি করে ২০০ টাকা করে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মোস্তফা। স্থানীয় ইটভাটার মালিকদের কাছে এই মাটি বিক্রি করছেন তাঁরা।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পুরোনো বেড়িবাঁধসহ অন্য বাঁধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিগ্রহণকৃত জমি নদীতে হারিয়ে গেছে। ফলে পাউবো নতুন করে শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে। তবে বাঁধ নির্মাণের জন্য পাউবো এবার কোনো জমি অধিগ্রহণ করেনি। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই সুযোগে জমির প্রকৃত মালিকেরা প্রকল্প এলাকা থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন। আর কেউ প্রকল্পের পাশে পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। ফলে গোটা প্রকল্প চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই ঝুঁকি সত্ত্বেও পাউবো কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘নদীরক্ষা বাঁধ প্রকল্পের পাশ থেকে মাটি কাটলে প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়বে। মাটি কাটার বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’