শ্রদ্ধা ভালোবাসা আর চোখের পানিতে বিদায় দেওয়া হলো গারোদের সাংসারেক ধর্মের পুরোহিত (খামাল) শতবর্ষী জনিক নকরেককে। গতকাল শনিবার দুপুরে এক স্মরণসভা শেষে মধুপুরের চুনিয়ায় নিজ বাড়ির পাশে তাঁর সৎকার সম্পন্ন করা হয়। বার্ধক্যজনিত কারণে গত শুক্রবার সকালে নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
জনিক নকরেক ছিলেন বিলুপ্তপ্রায় সাংসারেক ধর্মের একনিষ্ঠ প্রকৃতি পূজারি খামাল (পুরোহিত)। তাঁর বয়স নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম তারিখ ৫ জানুয়ারি ১৯২৭। বয়স্কভাতার কার্ডে লেখা আছে ১৯১৪ সালে তাঁর জন্ম। তবে জীবিত থাকাকালে তিনি দাবি করেছিলেন, ২০২১ সালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১২৩ বছরের বেশি।
জনিক নকরেকের জন্ম ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উদ্য়পুরে। বাবা অতীন্দ্র মৃ। মা অনছি নকরেক। মধুপুর বনাঞ্চলের পীরগাছা ছিল নানার বাড়ি। নানা সুরমান চিরান। নানি বালমি নকরেক। সেই সূত্রেই ত্রিপুরা থেকে মধুপুরে আসা। স্ত্রীর নাম অনিতা মৃ (মৃত)। বিয়ের পর ত্রিপুরায় আর ফেরা হয়নি জনিকের। তিনি পাঁচ ছেলে, তিন মেয়েসহ নাতি-নাতনি ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শনিবার সকালে চুনিয়ায় জনিক নকরেকের নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ আদিবাসী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি অজয় এ মৃ, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, ফাদার লরেন্স সিএসসি, সাংবাদিক পরাগ রিসিলসহ অনেকেই তাঁর স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক, কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক অপূর্ব রাফায়েল মৃ, প্রধান শিক্ষক রাফায়েল মৃ, এপ্রিল পল মৃসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ছোটবেলায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গল্প শুনেছেন। যৌবনে দেখেছেন ব্রিটিশ শাসনের দাপট। পাকিস্তান-ভারত বিভক্তি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সবই দেখেছেন তিনি।