উত্তরবঙ্গে শীতের দিনগুলো একটু বেশি ধূসর। রেলের শহর সৈয়দপুরে এই ধূসর রং ম্লান করে দিচ্ছে একটি রেল কোচ। পুরো শরীরে উজ্জ্বল রং মেখে সেটি দাঁড়িয়ে আছে সৈয়দপুর স্টেশনে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভিড় করে দেখছেন সেটি। কেউ তুলছেন সেলফি, কেউ সেই কোচটিকে প্রেক্ষাপটে রেখে তুলছেন দলীয় ছবি। কেউবা কোচের ভেতরে ঢুকে দেখছেন ও শুনছেন।
উজ্জ্বল রঙে রাঙানো এই কোচটি আসলে ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’। নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে রেলপথ মন্ত্রণালয় এটি নির্মাণ করেছে। স্থিরচিত্র, রেপ্লিকা ও ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই জাদুঘর।
পরিপাটি করে সাজানো কোচটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। সেটিতে ঢুকলেই কানে আসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। দরজার পাশে মুজিব শতবর্ষের লোগো। আছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আন্দোলন-সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলা ভিডিও চিত্র। জাদুঘরটিতে রাখা হয়েছে জাতির পিতার টুঙ্গিপাড়ার বাড়ির আলোকচিত্র, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি। আছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমা, দলীয় প্রতীক নৌকা, মুজিব কোট, তামাকের পাইপ, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের আলোকচিত্র, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধের রেপ্লিকা।
রেল কোচের ছোট্ট পরিসরে জয় বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন বুকশেলফ। সেখানে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর লেখা বিভিন্ন বই এবং তাঁর কর্মময় জীবনের ওপরে লেখা বিভিন্ন লেখকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই। শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’।
সোমবার সকালে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কার্যালয় থেকে ভ্রাম্যমাণ এই রেল জাদুঘর সৈয়দপুরে এসে পৌঁছায়। বর্তমানে সেটি স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পূর্ব দিকে রাখা হয়েছে। সেদিন বিকেল থেকেই দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জাদুঘরটি। প্রদর্শনের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেটি থাকবে সৈয়দপুর রেলস্টেশনে। সকাল আটটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত এবং বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত জাদুঘরটি সবার জন্য খোলা থাকবে।
রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা। বিনা মূল্যে সবাই ঘুরে দেখছেন সেটি।