ঝড়-বৃষ্টি কিংবা অসুখ-বিসুখ যাই হোক, পাঁচবছর ধরে বাইরে থেকে পানি এনে ওঠাতে হয় পাঁচতলার ফ্ল্যাটে। দুই চাচার কারসাজিতে লম্বা সময় ধরে পানির সংযোগ বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ ফ্ল্যাটটির মালিক হালিমা খাতুনের। আদালতে গিয়ে মামলা করেও এ সমস্যার সমাধান পাননি তিনি। বরং আদালতের রায় ও ডিক্রি উপেক্ষা করে পানির সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফ্ল্যাটটি দখল করার জন্য চাচারা এমন করছেন বলে দাবি শিক্ষানবিশ আইনজীবী হালিমার।
ওয়ারিশসূত্রে বংশালের নর্থ-সাউথ রোড এলাকার লুৎফর রহমান লেনের একটি পাঁচতলা বাড়িতে ওই ফ্ল্যাট পেয়েছেন তিনি। কিন্তু পানির সংযোগ না থাকায় পরিবার নিয়ে কঠিন দুর্দশায় জীবন কাটাচ্ছেন শিক্ষানবিশ এই আইনজীবী।
হালিমার অভিযোগ যে দুই চাচার বিরুদ্ধে—মো. সালেহীন ও মো. বাদশা মিয়া, একই ভবনে থাকেন তাঁরাও। কিন্তু হালিমার অভিযোগ নিয়ে কথা বলা যায়নি তাঁদের সঙ্গে। তবে হালিমার দুই চাচি দাবি করেছেন, পানির বিল পরিশোধ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় হালিমার ফ্ল্যাটের পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
ভাইয়েরা ফ্ল্যাট দখল করতে পারেন—এমন আশঙ্কা থেকে দুই মেয়ে ও স্ত্রীর নামে ২০০৫ সালে ফ্ল্যাটটি দলিল করে দেন হালিমার বাবা মো. আলাউদ্দীন। হালিমার অভিযোগ, ফ্ল্যাট তাঁদের নামে লিখে দেওয়ার পর থেকেই চাচারা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। ২০০৬ সালে হালিমার মা হাবিবা খাতুন সহকারী জজ আদালতে একটি চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন। ২০১৫ সালে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি বন্ধের ব্যাপারে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ডিক্রি জারি করেন আদালত।
এরপরও বিষয়টির সমাধান হয়নি। একজন সরকারি উকিলের সহায়তায় হালিমার চাচারা এবার বণ্টন, পিটিশন এবং আপিল মামলা দায়ের করেন। হালিমার দাবি, ‘বণ্টন মামলার নথি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। পিটিশন ও আপিল মামলায় আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন।’
হালিমা আরও অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার রায় ও ডিক্রি লঙ্ঘন করে পানির লাইন বন্ধ করে দেন তাঁর চাচারা। পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় বংশাল থানায় একটি জিডি করেন হালিমা।
এ বিষয়ে জানতে ওই সরকারি উকিলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওয়াসার রাজস্ব জোন-২-এর রাজস্ব পরিদর্শক মো. আমির হোসেন বলেন, ‘সেই বাসায় যে লাইন ইতিমধ্যে দেওয়া আছে, সেটার অনেক টাকা বকেয়া ছিল। বকেয়া থাকলে নতুন লাইন দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। তা ছাড়া, পারিবারিক কিছু ঝামেলা আছে, আদালতে মামলা চলছে। এসব সমাধান হলে অবশ্যই লাইন দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে হালিমা বলেন, ‘বাড়িটির নিচতলার একটি অফিস ও দোকানের ভাড়া থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে পানির বিল দেওয়ার কথা। কিন্তু চাচারা সেটা করেননি।’ বংশাল থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু আদালতে প্রক্রিয়াধীন, সেহেতু এখানে থানা-পুলিশের কিছু করার নেই।’
৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মামুন বলেন, ‘একটা পরিবার পানি পাবে না, এটা তো হতেই পারে না। লিখিত অভিযোগ জানালে অবশ্যই পানির ব্যবস্থা করা হবে।’