শেরপুরের নকলা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলাপাড়া মহল্লার আজগর আলী (৬০) ও আব্দুল কদ্দুসের (৭০) নেশা মৃতের সৎকারে কবর খুঁড়ে দেওয়া। নিজ এলাকা এবং আশপাশের এলাকার কারওর মৃত্যুর খবর পেলেই নিজেদের কাজ ফেলে ছুটে যান সেখানে। নিজেদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও বিনা টাকায় কবর খুঁড়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে দেন তাঁরা।
আজগর আলী পেশায় ভ্যানচালক ও আব্দুল কদ্দুস দিনমজুর। সারা দিন পরিশ্রম করে যা পায় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলে তাঁদের সংসার। কিন্তু অশিক্ষিত আজগর আলী ও আব্দুল কদ্দুস এলাকা বাসিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে না পারলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন বিপদের দিনে কীভাবে মানবতার হাত বাড়িয়ে বিপদগ্রস্ত ও শোকার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। এ জন্য এলাকাবাসীর কাছে তাঁরা আলোকিত মানুষ হিসেবে পরিচিত।
আজগর আলী বলেন, ‘কবর হল মানুষের শেষ ঠিকানা। আমিও একদিন মরে যাব। এ চিন্তা থেকেই গ্রামের কিংবা আশপাশের এলাকার কেউ মারা গেলে টাকা-পয়সা ছাড়াই কবর খুঁড়ে দিই। এই কাজ করে আনন্দ পাই। যত দিন বেঁচে আছি তত দিন এই কাজ করে যাব। আব্দুল কদ্দুস বলেন, কবর খোঁড়ার কথা শুনলে মানুষ ভয় পায়। টাকা দিলেও এই কাজের জন্য মানুষ পাওয়া যায় না। তাই কেউ মারা গেলে কবর খুঁড়ে দিই।’
৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইন্তাজ আলী জানান, ‘আজগর আলী ও আব্দুল কদ্দুস দুজনই এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। নিজেরা অর্থাভাবে জীবন কাটালেও এলাকার কেউ মারা গেলে তাঁরা নিজেদের কাজ ফেলে টাকা ছাড়ায় কবর খুঁড়ে দেন। আমি প্রথম মেয়াদে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আব্দুল কদ্দুসকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাঁদেরকে পৌরসভা থেকে সহযোগিতা করা হয়।’ কলাপাড়া সমাজ উন্নয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন বলেন, ‘আব্দুল কদ্দুস ও আজগর আলীর মত মানুষের এখন পাওয়া যায় না। এলাকায় টাকা দিয়েও যখন কাজের মানুষ পাওয়া যায় না তখন বিনা পারিশ্রমিকে তাঁদের কবর খুঁড়ে দেওয়ার বিষয়টি আমাকে মুগ্ধ করে।’