আরাকান রাজা মিন সো মোনের মৃত্যুর পর মিনখারি (১৪৩৩-১৪৫৯) রামু দখল করেন। সময়টা ১৪৩৪ থেকে ৩৫ সাল। সে সময় রামুতে গৌড়ের সুলতানের পক্ষে সামন্ত রাজা হিসেবে চাকমারা রাজত্ব করত। মিন খারির আক্রমণে চাকমা রাজা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। গৌড় থেকে কোনো সাহায্য না আসায় চাকমারা মিন খারির সঙ্গে সন্ধি করে এবং বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ পাড় পর্যন্ত ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। মনে করা হয়, বর্তমানে রাজারকুল গ্রামটি সেই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। এমন ইতিহাসের কথা জানান রামুর ইতিহাস বিশ্লেষক ও আইনজীবী শিরুপন বড়ুয়া।
সেই রাজাদের গ্রাম রাজারকুলে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে বই পড়া কার্যক্রম চলছে জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারে। রামু উপজেলার পূর্ব সীমান্তে বাঁকখালী নদীর পাড় ঘেঁষে পূর্ব রাজারকুল গ্রামের অবস্থান। বর্ষায় এখনো নৌকায় পার হয়ে এবং শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় গ্রামটিতে। ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস এখানে। ২০১৭ সালে এখানে গড়ে ওঠা জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারে শুধু বই পড়া নয়, আছে আরও অনেক কার্যক্রম। এগুলোর মধ্যে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে খেলাধুলা, গ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য বড় পর্দায় সাপ্তাহিক সিনেমা দেখানো ইত্যাদি।
পাঠাগারটির অর্থ সম্পাদক নীরব বড়ুয়া জানান, ১০ শতাংশ জমির ওপর দোতলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে, কিন্তু অর্থাভাবে থেমে আছে কাজ। তারপরেও দমে যাননি সংগঠকেরা। কাঠ দিয়ে দোতলা ভবন বানিয়ে সাময়িকভাবে পাঠাগারের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। এর অন্যতম সংগঠক অজয় বড়ুয়া জানান, দোতলা ভবনের কাজ শেষ হলে পাঠাগারের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। নিচতলায় পাঠকক্ষ এবং দোতলায় প্রায় ৫০টি কম্পিউটার নিয়ে হাইটেক পার্ক করার স্বপ্ন আছে এর কর্তৃপক্ষের।
২০১৮ সালে সরকারি নিবন্ধন পাওয়া পাঠাগারটি প্রতিবছর সরকারি প্রণোদনার বই এবং সামান্য অর্থ বরাদ্দ পায়। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা বাঁকখালী নদীর পাড়ে রাজারকুলের এ পাঠাগার সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন। তিনি জানান, উপজেলায় একমাত্র সচল পাঠাগার এখন জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার।
কক্সবাজার জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ঋষিকেশ পাল জানান, জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একদল তরুণ। তাঁদের দেওয়া সময় ও পরিশ্রম পুরো কক্সবাজারে পাঠাগারটির ভালো অবস্থান তৈরি করেছে।