গ্যাস সংযোগের অভাবে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির চা-বাগানগুলোতে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত চা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। কয়লা ও তেল দিয়ে কারখানা চালাতে গিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এসব চা-বাগানে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার একটি প্রস্তাব ২৩ বছর ধরে মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।
বাগান মালিকেরা অভিযোগ করেন, ফটিকছড়ির ১৭টি চা-বাগান রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এরপরও গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন না তাঁরা। এতে আশানুরূপ উৎপাদন হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার ২২টি চা-বাগানের মধ্যে শুধু ফটিকছড়িতেই রয়েছে ১৭ টি। এখানকার মোট ভূমির প্রায় ২০ শতাংশজুড়ে রয়েছে এসব চা-বাগান। এখান থেকে দেশের প্রায় ১০ শতাংশ চায়ের জোগান হয়। বাংলাদেশ চা-সংসদের পক্ষে নাসির উদ্দিন বাহাদুর ১৯৯৮ সালের ১৬ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ফটিকছড়ির চা শিল্পের উন্নয়নে প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ স্থাপনের একটি আবেদন করেন। এ ব্যাপারে একটি প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরি করে দেওয়ার জন্য চা সংসদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী সংসদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য তৎকালীন বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেডে পাঠানো হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ওই বছরের ১৭ মে প্রকল্পের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের ২৩ তম সভায় প্রকল্পটি বাদ দিয়ে সিলেটের চা-বাগানগুলোকে গ্যাসের আওতায় আনার লক্ষ্যে ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেন। এতে থমকে যায় ফটিকছড়ির বাগানগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কার্যক্রম।
অন্যদিকে, গত ২০১০ সালের মার্চ থেকে ফটিকছড়ি ও পার্বত্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা সীমান্তের সেমুতং গ্যাস কারখানা থেকে গ্যাস তোলার কার্যক্রম শুরু হলে সেখান থেকে বাগানগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার একটি সম্ভাবনা ছিল।
২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে সেখানকার উত্তোলিত গ্যাস উপজেলার নেপচুন চা-বাগানের ওপর দিয়ে ফটিকছড়ির-নাজিরহাট-হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ হয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক তদবিরের পর সম্প্রতি উপজেলার নেপচুন চা-বাগানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য বাগানগুলো এখনো পায়নি গ্যাস।