হোম > ছাপা সংস্করণ

শব্দের আড়ালে গল্প: জিআই

রাজীব কুমার সাহা

বিশ্বায়নের কল্যাণে আমরা একে অপরের সঙ্গে সহজেই নানাভাবে সংযুক্ত হতে পারছি। যার ফলে একটি দেশ আরেকটি দেশের সেবা বা পণ্য গ্রহণ করতে পারছে। বিশ্বায়নের এই ব্যাপকতর সংযোগসূত্রে আমরা বিনিময় করছি প্রযুক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক বহুবিধ উপকরণাদি। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে আমরা ‘জিআই’ শব্দবন্ধটির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। কিন্তু জিআই কী? এটি কেন প্রদান করা হয় বা কারা এটি প্রদান করছেন? এর প্রাপ্তিযোগে আমাদের অর্থনৈতিকভাবে কী সুবিধা হবে?

জিআইয়ের পূর্ণরূপ হলো ‘জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন’। যার অর্থ ভৌগোলিক নির্দেশক চিহ্ন। জিআই অ্যাক্রোনিম বা সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি মূলত কোনো পণ্যের একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থলের কারণে এর খ্যাতি বা গুণাবলি নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত জিআইয়ে উৎপত্তিস্থলের নাম (শহর, অঞ্চল বা দেশ) অন্তর্ভুক্ত থাকে। যদিও জিআই তকমা পেতে কোনো পণ্যের আঞ্চলিক বিশেষত্ব ও গুরুত্ব থাকতে হয়; অর্থাৎ কোনো অঞ্চল বা দেশের নামে জিআই হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, জিআই একটি দেশ, অঞ্চল বা এলাকার পণ্যের চিহ্ন বা নামকে ইঙ্গিত করে। আবশ্যিকভাবেই সেই নির্দিষ্ট পণ্যের ভৌগোলিক গুণ, মান ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়।

ডব্লিউআইপিও (ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন) হলো জিআই পণ্যের স্বীকৃতিদানকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) কর্তৃক জিআই পণ্য নিবন্ধনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

কোনো একটি দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া এবং ওই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে ওই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়; অর্থাৎ সেই পণ্য শুধু ওই এলাকা ব্যতীত অন্য কোথাও উৎপাদন করা সম্ভব নয়। কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী সহজেই ব্র্যান্ডিং করা যায়। পণ্যগুলোর আলাদা একটি কদর থাকে, পাশাপাশি ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়। যেমন ঢাকাই জামদানি। এই জামদানি একসময় কেবল ঢাকার কারিগরেরাই উৎপাদন করতে পারতেন। আবার এই জামদানি তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপযোগী ছিল ঢাকার আবহাওয়া। ফলে যুগের পর যুগ সারা বিশ্বে এই জামদানি ঢাকাই জামদানিরূপেই সুপরিচিত।

বাংলাদেশে বর্তমানে জিআই ট্যাগপ্রাপ্ত পণ্যের সংখ্যা ১৭টি। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য হিসেবে ঢাকাই জামদানি ২০১৬ সালে নিবন্ধন সনদ লাভ করে। এরপর ২০১৭ সালে ইলিশ, ২০১৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, ২০২০ সালে ঢাকাই মসলিন এবং ২০২১ সালে রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, কালিজিরা চাল, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল এবং নেত্রকোনার বিজয়পুরের সাদা মাটিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

২০২২ সালে নতুন নিবন্ধিত জিআই পণ্য হলো বাগদা চিংড়ি। চলতি বছর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বগুড়ার দই, বাংলাদেশের শীতলপাটি, শেরপুরের তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম এবং নাটোরের কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বাংলাদেশের জিআই পণ্যের নিবন্ধন ও সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করেছে।

প্রকৃতপক্ষে জিআই সুবিধাপ্রাপ্তির মাধ্যমে আমাদের পণ্যের আঞ্চলিক ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনো দেশ আর ওই সব পণ্যের মালিকানা বা স্বত্ব দাবি করতে পারবে না। বিদেশি পণ্যের ভিড়ে নিশ্চিত হবে আমাদের পণ্যের মালিকানা। জিআই প্রসঙ্গটি সবিস্তারে জানতে ও জানাতে পাঠ্যক্রমে, বিশেষ করে কৃষি ও ব্যবসায় শিক্ষায় এর অন্তর্ভুক্তি এখন জরুরিভাবে প্রয়োজন।

লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ