তিন দিন আগে মিরপুরে খুলনা-বরিশাল ম্যাচ চলার সময় ড্রেসিংরুমে খালেদ মাহমুদ সুজনের ধূমপানের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর একটা প্রশ্ন ছিল, তিনি আদৌ শাস্তি পাবেন কি না। বিসিবির একজন প্রভাবশালী পরিচালক হলেও সুজন শাস্তি পেয়েছেন। তাঁকে ম্যাচ ফির ৩০ শতাংশ জরিমানা আর তাঁর নামের পাশে ২ ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ হয়েছে।
টিভি ফুটেজ থাকায় সুজনের ভুল অস্বীকার করার উপায়ও ছিল না। সূত্র জানায়, তিনি দ্রুত তা স্বীকারও করেছেন। এবং ম্যাচ রেফারির শাস্তি মেনে নিয়েছেন। সুজনের শাস্তি হয়েছে গত শুক্রবার ম্যাচ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। তবে বিসিবি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে গতকাল। শুধু সুজনই নন, গতকাল বিসিবি একসঙ্গে তিন ক্রিকেটারের শাস্তির কথা জানিয়েছে। গত পরশু শেষ চারের লড়াইয়ের ম্যাচে শাস্তি পেয়েছেন রংপুর রাইডার্সের মেহেদী হাসান ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এলিমিনেটর ম্যাচে বরিশালকে হারিয়ে রংপুর জয় উদ্যাপনের সময় হেলমেট খুলে ব্যাট দিয়ে আঘাত করেন মেহেদী। একই ম্যাচে নিয়ম ভেঙেছেন রংপুরের হয়ে বিপিএল খেলা নিকোলাস পুরান। মোসাদ্দেক আর পুরানের শাস্তি ভিন্ন কারণে। মোসাদ্দেক টুর্নামেন্টের লোগো নির্দেশনা মানেননি আর পুরান পোশাক-সংক্রান্ত নিয়ম ভেঙেছেন।
আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে এই বিপিএলে শাস্তির ঘটনা তুলনামূলক বেশিই দেখা যাচ্ছে। ডাকসাইটে ও প্রভাবশালী কোচ সুজনের শাস্তি পাওয়ার ঘটনা ‘বিশেষ’ই বলতে হবে। বিসিবির ইতিহাসে কোনো পরিচালক এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে ধূমপানের দায়ে শাস্তি পেয়েছেন কি না, গবেষণাসাপেক্ষ বিষয়। এই টুর্নামেন্টে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে আরেক ডাকসাইটে কোচ সালাউদ্দিনকেও। চট্টগ্রাম পর্বে এডিআরএস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্ফোরক মন্তব্য করে তিনি শাস্তি পেয়েছিলেন।
আরেক ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশীদ বললেন, ‘শাস্তির দৃষ্টান্ত না থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। শক্তভাবে ম্যাচ পরিচালনা করতে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল আমাদের যথেষ্ট কাজের স্বাধীনতা দিয়েছে। সেদিন মেহেদী যে উদ্যাপন করেছে, এটা ক্রিকেটের চেতনার সঙ্গে যায় না। ২০ বছর বয়সে আমরা কোনো দিন সিনিয়র ক্রিকেটারদের সামনে এভাবে করেছি কি না মনে পড়ে না। অসংখ্য মানুষ এই দৃশ্য দেখেছেন। এতে ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ভালো হয় না। আমরা যদি ওদের শিক্ষা না দিই, আর তারা যদি শিখতে না চায়, তাহলে তো আচরণবিধির মধ্যে পড়বেই।’
চট্টগ্রামে খুলনা টাইগার্স-রংপুর রাইডার্সের ম্যাচে ঘটেছে ঘটনাটা।
প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের দেরিতে নামতে দেখে অনফিল্ড আম্পায়ার তানভীর আহমেদকে খুলনা ওপেনার কিছু করার তাগিদ দিচ্ছিলেন। এতে আম্পায়ার তানভীর কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন, সেটি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ফিরে যাওয়ার সময় তামিমের ভাষা তাঁর পছন্দ হয়নি।
সূত্র জানায়, আম্পায়ার পরে তামিমের বিরুদ্ধে লেভেল-৩ আচরণবিধি ভঙের অভিযোগ এনে রিপোর্ট করেছিলেন। এই অপরাধের শাস্তি ২ থেকে ৬ ম্যাচ নিষিদ্ধ। আম্পায়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল তামিমকে ২ ম্যাচ নিষিদ্ধও করেন। তামিম দ্রুত শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করেন।
ম্যাচ রেফারি শুনানিতে বসেন চার আম্পায়ার, দলের ম্যানেজার, অধিনায়ক ও তামিমকে নিয়ে। তামিম সেখানে জোরালো ভাষায় দাবি করেন, রিপোর্টে যে গালি দেওয়ার কথাটা এসেছে, সেটি তিনি তানভীরকে দেননি। তিনি আম্পায়ারকে এ-ও প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারবেন, এটা আপনার উদ্দেশে দিয়েছি? নাকি নিজেকেই গালি দিয়েছি?’ এ প্রশ্নে তানভীর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
শুনানি শেষে তামিম ‘দোষী নয়’ বলে রায় দেন ম্যাচ রেফারি। আজকের পত্রিকাকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দেবব্রত।