চাঁদপুরের শাহরাস্তির একসময়ের পরিচিত সেচযন্ত্র দোন ও সেঁউতি হারিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে উপজেলার বহুল ব্যবহৃত এই কৃষিযন্ত্রের দেখা আর মেলে না। তবে মাটির উপরিভাগের পানির সঠিক ব্যবহারের জন্য এই ধরনের পরিবেশ বান্ধব সেচযন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া এই যন্ত্র ভূগর্ভের পানির ব্যবহারও কমাতে পারে। এ জন্য নদী, খালসহ মাটির উপরিভাগে পর্যাপ্ত পানি থাকার ব্যবস্থা করা হবে।
আগের দিনে জমিতে সেচের জন্য টিন বা বাঁশের তৈরি সেঁউতি ও কাঠের দোন ব্যবহার করা হতো। স্থানীয়রা সেঁউতিকে ‘হেইত’ ও দোনকে ‘দোংগা’ বলে জানেন। এক সময় গ্রাম বাংলার কৃষিতে সেচযন্ত্র হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা ছিল। টিন বা বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি সেঁউতি দিয়ে খাল বা নিচু জমি থেকে সেজ করা হতো। এ ছাড়া উঁচু-নিচু জমিতে সেচ দিতে কাঠের দোন ব্যবহার হতো।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আম, কাঁঠাল গাছের মাঝের অংশ খুঁড়ে নালার মতো করে তৈরি হতো দোন। এ দিয়ে জমিতে সেচকাজ চলত। দোন দিয়ে সেচ দিতে শ্রমিকের খরচ ছাড়া বাড়তি কোনো খরচ হয় না। তা ছাড়া এটি সহজে বহনীয়। এ কারণে দোন দিয়ে সেচ দেওয়ায় স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন চাষিরা।
এর ব্যবহার সম্পর্কে জানা গেছে, একটি বাঁশের শক্ত খুঁটি পুঁতে তার সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বাঁধা হতো। এর এক অংশে দোনের মাথা, অন্য অংশে ভারসাম্য তৈরির জন্য মাটির ভরা বস্তা তুলে দেওয়া হয়। দোনটি পানিতে ডুবিয়ে তুললে এক সঙ্গে অনেক পানি উঠে আসে। এভাবে অনেকটা সময় সেচ দিলে জমিতে পানির চাহিদা মেটে।
উপজেলার শাহরাস্তি মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. ফজলে নূর নেহাল জানায়, সে কখনো দোন বা সেঁউতি দেখেনি। তবে বই পড়ে জানতে পেরেছে এসব কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়।
নিজমেহার গ্রামের কৃষক মো. আবু ইউসুফ (৪৫) জানান, ‘আমি বাপ-দাদাদের দোন ও সেঁউতি ব্যবহার করে সেচকাজ করতে দেখেছি। এ জন্য শখের বশে একটি সেঁউতি তৈরি করে তা দিয়ে পানি সেচ দিয়েছি।’
একই গ্রামের মো. আলমাছ (৬৮) জানান, ‘আগে আমরা দোন-সেঁউতি দিয়েই সেচ চালাতাম। এখন আধুনিক অনেক যন্ত্রপাতি আসায় এগুলোর ব্যবহার হয় না।’
চাষিরা বলেন, আধুনিক যন্ত্র তাঁদের জন্য আশীর্বাদ হলেও গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে এই ধরনের সহজলভ্য কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা উচিত।