রফিকুল ইসলামের বাবা ছিলেন ঢাকার রেলওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক। ১৯৪৪ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত থাকতেন ফজলুল হক হলের গেটের উল্টোদিকে রেল কোয়ার্টারে। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদর দপ্তর ছিল ফজলুল হক হল। তাই স্কুলের ছাত্র হলেও ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ এসে পড়ে রফিকুল ইসলামের ওপর।
১৯৪৩ সালে একটি কোডাক সিক্স টোয়েন্টি বক্স ক্যামেরার মালিক হলেন রফিকুল ইসলাম। বহু ছবি তোলার সাক্ষী এই ক্যামেরা। ১৯৪৯ সালে তিনি তাঁর এক বিলেতফেরত ভাইয়ের কাছ থেকে উপহার পেলেন ‘ভয়েগ ল্যান্ডার’ ফোর পয়েন্ট ল্যান্স রিফ্লেক্ট ক্যামেরা। এ ক্যামেরাটি দিয়ে তিনি ভাষা আন্দোলনের অনেক ঐতিহাসিক ছবি তুলেছিলেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে গাজীউল হকের সভাপতিত্বে সেই ঐতিহাসিক সভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহদ্বারের বন্ধ করা লোহার গেটের দিকে অগ্রসর হলেন শিক্ষার্থীরা। রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তখন ছিল তাঁর ক্যামেরাটি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ছবি তুলতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ছাদে উঠতে হবে। কিন্তু সেই ছাদে ওঠার কোনো সিঁড়ি ছিল না। ছিল ছোট্ট একটি ফোকর। সেই ফোকর দিয়ে বন্ধুরা রফিকুল ইসলামকে ছাদে তুলে দিলেন। সেখান থেকেই আমতলার সভার এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গের জন্য ছাত্রছাত্রীদের লম্বা সারির ছবি তুললেন রফিকুল। ক্যামেরার এক এক রোলে ফিল্ম ছিল মাত্র আটটি। শার্টের নিচে ক্যামেরা খুলে একবার ফিল্ম বদলে নিতে হয়েছিল। সেদিনের সভা ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ১৬টি ছবি তুলতে পেরেছিলেন তিনি। সেই ছবিগুলো এখন ইতিহাসের অংশ। ফিল্ম শেষ হয়ে যাওয়ায় একুশের প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের গুলিবিদ্ধ মস্তিষ্কের খুলি উড়ে যাওয়া ছবিটি তুলতে পারেননি তিনি। সেই ছবি তুলেছিলেন তাঁর বন্ধু আমানুল হক।
সূত্র: রফিকুল ইসলাম, একুশের সংকলন ১৯৮১, ভাষা আন্দোলনের ছবি তোলা, প্রথম আলো।