হোম > ছাপা সংস্করণ

কেন এ ঘৃণ্য বর্বরতা

তাপস মজুমদার

মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলার তথাকথিত অপরাধে খুলনায় বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭, খুলনা জেলা চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচিকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন এবং দুই ঘণ্টা হাত বেঁধে অবরুদ্ধ করে রাখেন এলাকার এক মৌলবাদী পরিবারের সদস্যরা। তাঁর অবস্থা গুরুতর।

খবরে প্রকাশ, বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামের ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন। স্থানীয় সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে তিনি এবং এলাকার অন্য নারী ফুটবলাররা ফুটবলের অনুশীলন করে থাকেন। সেখানে এসে নূপুর খাতুন নামে প্রতিবেশী এক মেয়ে তাঁর ছবি তোলেন; অতঃপর সাদিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা-বাবাকে দেখান এবং বাজে মন্তব্য করেন।

দুদিন পর গত শনিবার সাদিয়া নাসরিন এর প্রতিবাদ জানালে নূপুর তাঁকে চড়-ঘুষি মেরে জখম করেন। বিষয়টির প্রতিবাদ জানাতে সাদিয়ার মা-বাবা ক্লাবের কোচ মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক ও অন্য খেলোয়াড়দের নিয়ে নূপুরদের বাসায় যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নূপুরের বাড়ির লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেন। এই ঘটনায় ফুটবলার মঙ্গলী বাগচি, হাজেরা খাতুন ও জুঁই মণ্ডল আহত হন। সাদিয়া জানান, তাঁদের লোহার রড দিয়ে হামলা ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে এসে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

এই অসভ্য, বীভৎস ও ঘৃণ্য ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। দেশে যেখানে নারী ফুটবলই গর্ব করার মতো একটি ক্ষেত্র, সেখানেই মৌলবাদীদের আঘাত! অত্যন্ত বিরুদ্ধ একটি পরিবেশে এ দেশের নারী ফুটবলাররা সংগ্রাম করে চলেছেন। এর মধ্যে এই বীভৎসতা।

তাঁরা ভয়ে আছেন। কতটুকু বয়স তাঁদের? দ্বাদশ শ্রেণির দ্বার অতিক্রম করেননি। তাঁরা তো আমাদের ভবিষ্যৎ। একেকজন একেক দিকে, যাঁর যেটাতে আগ্রহ, সেটায় তাঁদের জীবন গড়বেন, এটাই স্বাভাবিক। এই নারী ফুটবলারদের প্রতিভা প্রকাশিত হয়েছে ফুটবল খেলায়—যেখানে তাঁদের প্রচণ্ড অনুরাগ। কোন নাগরিকের কোন বিষয়ে আগ্রহ বা অনুরাগ তা অন্য কোনো নাগরিকের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্রীড়নক হতে পারে না।

প্রশ্ন জাগে, কারা এটা শেখাচ্ছে? এই পরিবারটিকে অথবা এই মানুষগুলোকে কে পরামর্শ দিয়েছে যে মেয়েরা ফুটবল খেললে তাঁকে শাসাতে হবে, শায়েস্তা করতে হবে? অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এটা শুধু ফুটবল খেলা বা না-খেলার ব্যাপার নয়, এটা নারী স্বাধীনতার সঙ্গেও যুক্ত। পাশাপাশি সমাজের শৃঙ্খলার সঙ্গেও বিষয়টি যুক্ত।

প্রথমদিকে এই ঘটনার জোরালো কোনো প্রতিবাদ না হলেও এখন নাগরিক সমাজ ফুঁসে উঠেছে। পুলিশ একজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে এবং তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে।

যে নারী ফুটবল দল সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় ফুটবলের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনার আলো আমাদের সামনে জ্বালিয়ে দিয়েছে, তাতে গর্বিত না হয়ে উল্টো তাঁদের আক্রমণ করা কোনো ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত কি না, তা অত্যন্ত কঠোরতা ও দ্রুততার সঙ্গে ভেবে দেখা দরকার। এ ব্যাপারে শিথিলতার কোনো সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির অনুশীলনে মেয়েদের উপস্থিতির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। আগে যেখানে প্রায় ৩০ জন অনুশীলন করতেন, হামলার পর ভয়ে ১০-১৫ জনের বেশি আসছেন না।

প্রত্যেক নাগরিকের এটা স্পষ্টভাবে বোঝা দরকার যে কেউ নিজের ইচ্ছামতো কোনো নিয়ম জারি ও বাস্তবায়ন করতে পারে না। নূপুরের পরিবারের কোনো অধিকার নেই সাদিয়া, মঙ্গলী, জুঁই বা হাজেরাকে শাসন করার। মারধরের এক পর্ব অতিক্রম করার পর তাঁরা অ্যাসিড মেরে মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে এটা দুঃসাহস। কোথা থেকে পাচ্ছেন এই সাহস?

মামলার একজন আসামি জেলে আছেন। তিনজন আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু মামলা তো দীর্ঘকালের বিষয়। কেউ জানে না কত দিনে তা নিষ্পত্তি হবে। মামলার ফলাফল পাওয়ার আগে সমাজে এই মেয়েদের যে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করতে হয়, তাতে তাঁদের লেখাপড়া, শখ-আহ্লাদ, এমনকি পারিবারিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়ে যায়।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—আমরা যে একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে চাই তার কী হবে? সমাজের এই বিপুল অন্ধকার বজায় রেখে, আধুনিক সমাজ গড়া কি আদৌ সম্ভব? বিশ্বায়নের যুগে সব কুসংস্কার পেছনে ফেলে এগোতে না পারলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাব কী করে? তাল মেলাতে না পারলে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক সব মুক্তি যে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে বাধ্য, তাতে আর সন্দেহ থাকে কি?

অতএব, এই নৃশংস অসভ্যতার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব সমাজবিরোধীর উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি এ রকম অপভাবনার নাগরিকদের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য কালবিলম্ব না করে এখনই কার্যক্রম হাতে নেওয়া জরুরি।

লেখক: সাংস্কৃতিক সংগঠক, সাবেক ব্যাংকার

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ