ভোলার লালমোহনের মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে দেখা দিয়েছে রুপালি ইলিশের সংকট। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশা নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার সময় বেকার থেকেও এখন নদীতে মাছের সংকট দেখা দেওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান জেলেরা।
উপজেলার মৎস্যঘাটগুলো ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪-১৫ দিন ধরে নদীতে ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। সারা দিন জাল বেয়ে ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। ইলিশের প্রধান প্রজনন সময় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা শুরু হয়। এরপরেই জেলেরা জাল-নৌকা নিয়ে নেমে পড়েন। জালে নিষেধাজ্ঞার পরের কয়েক দিন ইলিশ ধরা পড়লেও সে ধারাবাহিকতা ছিল না বেশি দিন।
তবে মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদীর তলদেশ। কোথাও আবার ডুবোচর জেগে উঠেছে, তাই সাগর থেকে নদীতে আসতে পারছে না ইলিশ। বাধা পেয়ে দিক পরিবর্তন করছে।
জেলেরা জানান, নদীতে ইলিশ শিকারে গিয়ে তেলের খরচও উঠছে না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
বাত্তিরখাল মৎস্যঘাটের জেলে মনির মাঝি, কাঞ্চন মাঝি, মফিজ মাঝি জানান, বিগত সময় নিষেধাজ্ঞার পর জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেতেন, এখন আর সেই চিত্র নেই। তেলের খরচ না ওঠায় কেউ কেউ নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁদের একজন বললেন, দুই দিন আগে নদীতে গিয়ে তিন হাজার টাকার তেল ও বাজার খরচ হয়েছে কিন্তু মাছ পেয়েছি ৫০০ টাকার।
গজারিয়া খালগড়া মৎস্যঘাটের জেলে আজগর, হোসেন ও বেলায়েত বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর ভালো ইলিশ ধরা পড়ত, কিন্তু এখন অনেক কম। এতে অনেক লোকসান হচ্ছে।
একই ঘাটের আড়তদার মো. ফারুক বলেন, ‘নদীতে মাছ না থাকায় আড়তগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে। তেমন কেনাবেচা হচ্ছে না। জেলেরা আমাদের মাছ দিতে পারছেন না, আমরাও বিক্রি করতে পারছি না।’
লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রুহুল কদ্দুস জানান, প্রাকৃতিক পরিবেশ বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জেলেদের জালে এখন কিছুটা কম পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ। কিন্তু এ সমস্যা বেশি দিন থাকবে না, খুব কম সময়ের মধ্যে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্ল্যাহ জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, মোহনায় পলি জমে থাকায় ইলিশ উপকূলের দিকে আসতে পারছে না, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ইলিশের আরও সংকট দেখা দেবে। তাই নদী খনন জরুরি। এমন বাস্তবতায় ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি ইলিশ উৎপাদনও হুমকির মুখে পড়বে।