আফজাল হোসেনরা যখন নাটক করতে এসেছিলেন, তখন তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন বেকার। কিন্তু নাটকের নেশায় তাঁরা বেকারত্বের অভিশাপকে অগ্রাহ্য করে গেছেন। ফুলটাইম থিয়েটার করার সাহস তখন কীভাবে পেতেন, কে জানে।
এখন অনেক সময় জীবনবোধের সমস্যার কারণে থিয়েটারটাকে বোঝা হয় কম। আফজাল ভাবেন এ রকম: জীবনবোধ কোত্থেকে আসে? জীবন মানে তো এই নয় যে আপনি প্রতিদিন খেয়েদেয়ে বড় হচ্ছেন। পেটের খিদের চেয়ে অন্তরের খিদেটা কি কম? যেকোনো বিষয় কষ্টসাধ্য হলো মানুষের একধরনের উপার্জন হয়। এখন ততটা কষ্ট করা হয় বলে মনে হয় না।
এই সময়টায় এক মহা সংকট শুরু হয়েছে। যিনি অভিনয় জানেন, তিনি অভিনয় করেন। যিনি অভিনয় জানেন না, তিনিও অভিনয় করেন। যিনি নাটক লেখেন, তিনি তো নাটক লেখেন; যিনি নাটক লিখতে জানেন না, তিনিও নাটক লেখেন। বিষয়টা সর্বসাধারণের হয়ে গেছে।
পেশাদারির ব্যাখ্যা আফজালের কাছে এ রকম: নাটক লিখে আমি পয়সা রোজগার করি, এটা কি পেশাদারি, নাকি আমি ভালো নাটক লিখি, সেটা পেশাদারি? আমি নাটক পরিচালনা করি এবং অর্থ উপার্জন করি, এটা পেশাদারি, নাকি আমি পরিচালনা বুঝি, সেটা পেশাদারি? যে কাজ করে আয় করি, সেটা পেশাদারি নয়, আসলে এর মধ্যে আরও কিছু দেওয়ার আছে।
শুরুর দিকের একটা ঘটনা নিয়ে কিছু বলা যাক। সেলিম আল দীনের সদ্য লেখা নাটক ‘জুলান ও শালনা’ পড়া হয়েছিল দলে। মঞ্চায়ন হয়নি নাটকটার। আফজাল তখন থাকেন চারুকলার হোস্টেলে। ভোরে উঠে বারান্দায় গিয়ে উদাত্ত স্বরে আবৃত্তি করতেন, উরুক গোত্রবাসী শোনো, এখন জ্যোৎস্না হলে কেউ যায় না দ্রাক্ষাবনে…’।
হোস্টেলের সবাই তাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল আর সেখানে আফজালের নাম হয়ে গিয়েছিল, ‘উরুক গোত্রবাসী।’
সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, চোখের আলোয়, পৃষ্ঠা ৯৫-৯৭