উইলিয়াম কেরি ছিলেন ব্রিটিশ খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক, পণ্ডিত, ভাষাতাত্ত্বিক, অনুবাদক ও সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ববিদ।
উইলিয়াম কেরি ১৭৬১ সালের ১৭ আগস্ট ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনশায়ার, পলাইপুরী গ্রামে একটি দরিদ্র তাঁতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর ছিল অফুরন্ত জ্ঞানের তৃষ্ণা। ইংরেজি, লাতিন ও হিব্রুসহ তিনি বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় ভাষা শিখেছিলেন, তা ছাড়া উদ্ভিদবিদ্যা, উদ্যানবিদ্যা, জীববিজ্ঞান ও ভূগোল বিষয়ে পাঠ নিয়েছিলেন। ১৭৯৩ সালের নভেম্বরে তিনি নিজের পরিবার নিয়ে কলকাতায় আসেন।
কলকাতায় এসেই তিনি রামরাম বসুর কাছে বাংলা শেখেন। এ সময় ভীষণ অর্থকষ্ট থেকে মুক্তি পেতে উত্তরবঙ্গের এক নীলের ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। আরও কয়েকজন মিশনারি কলকাতায় আসেন ধর্ম প্রচার করতে। কিন্তু তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। এরপর কেরি তাঁদের সঙ্গে মিলে শ্রীরামপুর মিশন গড়ে তুলে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন, পরে যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ছাপাখানা হিসেবে খ্যাত হয়।
ইংল্যান্ড থেকে আসা কোম্পানির তরুণ সিভিলিয়ানদের দেশীয় ভাষা, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভূগোল ইত্যাদি শেখানোর উদ্দেশ্যে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন করেন।
এ দেশীয় পণ্ডিতদের নিয়ে কেরি শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করার মতো কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক, রামরাম বসু ও মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার লিখিত তিনটি বই প্রকাশ করেন। এ ছাড়া কেরি একটি বাংলা ব্যাকরণ, একটি বাংলা-ইংরেজি অভিধান এবং ইতিহাসমালা গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
তাঁর নির্দেশনায় তাঁর সহকর্মীরা যেসব পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং প্রকাশ করেন, সেগুলো বাংলা গদ্যের আদর্শ গঠন করে দেয়। পরে যাঁরা বাংলা ভাষায় লেখেন, তাঁরা অনেকেই এ রীতি গ্রহণ করেন। সে অর্থে কেরি বাংলা গদ্যরীতিকে একটি বিশিষ্ট ধারায় রূপ দেন।
কেরি সংস্কৃতসহ আরও একাধিক ভারতীয় ভাষা শিখেছিলেন। তিনি ১৩টি ভারতীয় ভাষার একটি বহুভাষিক অভিধান রচনা করেন।
কেরি বঙ্গদেশের কৃষি এবং উদ্যান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন। তিনি বঙ্গদেশের কৃষি-উদ্যান সমিতি গড়ে তোলেন।
১৮৩৪ সালের ৯ জুন ভারতের শ্রীরামপুরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।