যশোরের মনিরামপুরে সরকারি দামে সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ৬ থেকে ১৯ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। বিক্রেতারা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সারের বাড়তি দাম আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে আমন আবাদে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
এদিকে সারের বাজার নিয়ন্ত্রণে উপজেলা কৃষি অফিস নামমাত্র অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। তাঁদের এ অভিযানে লাভ দেখছেন না কৃষকেরা। তারা বলছেন, মাঝেমধ্যে সারের দোকানে জরিমানা করা হচ্ছে; কিন্তু জরিমানা করে চলে যাওয়ার পর আবার চড়া দামে সার বিক্রি হচ্ছে।
তবে উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্র বলছে, প্রতি মাসে সারের যে পরিমাণ চাহিদা দেওয়া হয়, তার চেয়ে অনেক কম বরাদ্দ আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশকদের নামে প্রতি মাসে যে সার বরাদ্দ হয়, ঠিকমতো তার সরবরাহ পান না তাঁরা। কোনো কোনো পরিবেশক গত দুই মাসে ফসফেট ও পটাশ সার তুলতে পারেননি।
এদিকে সরকারিভাবে ইউরিয়া ও ফসফেটের দাম কেজিপ্রতি ২২, পটাশ ১৫ ও ড্যাবের ১৬ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও এই দামে সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। সারের সংকটের অজুহাতে প্রতি কেজি ইউরিয়া ২৬-২৮, ফসফেট ও পটাশ ৩৪-৩৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
কাশিমনগর ইউনিয়নের আব্দুর রহমান নামের এক কৃষক বলেন, সাত বিঘা জমিতে আমন ও চার বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ আছে। সব সময় সারের প্রয়োজন হয়। কদিন আগে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে চার বস্তা ইউরিয়া, ১ হাজার ৪৪০ টাকা দরে পাঁচ বস্তা টিএসপি ও ১ হাজার ৫৪০ টাকা দরে দুই বস্তা পটাশ কিনেছি।
এই কৃষক বলছেন, সারের সংকট দেখিয়ে দোকানদারেরা আমাদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিচ্ছেন।
খোলাবাজারের সার বিক্রেতারা বলছেন, তাঁরা ইউরিয়া ২৫, টিএসপি ২৯ ও পটাশ ৩২ টাকা কেজি দরে কিনে আনছেন। তাই বাড়তি দামেই বেচতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ২২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় সার বেশি লাগছে। যে চাহিদা পাঠানো হচ্ছে, তার চেয়ে কম সার বরাদ্দ আসছে। তবে বাজারে সারের কোনো ঘাটতি নেই।
উপজেলার চাঁদপুর এলাকার খুচরা পরিবেশক আলী হোসেন বলেন, ‘চলতি মাসে ও আগের জুলাই মাসে টিএসপি ও পটাশের বরাদ্দ পাইনি। এ মাসে ২০০ বস্তা ইউরিয়া পেয়েছি, যা তিন দিনেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন কৃষক এলে সার দিতে পারছি না।’
পাইকারি পরিবেশ আব্দুল গফ্ফার বলেন, ‘৪-৫ মাসে পটাশ সরবরাহ দিতে পারেননি বিসিআইসি আমদানিকারক। টিএসপিও পাইনি দুই মাস। এ জন্য খুচরা পরিবেশকদের সার দিতে পারিনি। টাকা জমা দেওয়া আছে। কদিনের মধ্যে সার পাব।’
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসান পটাশের সরবরাহ না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবেশকেরা ঠিকমতো পটাশ সরবরাহ পাচ্ছেন না। আমাদের অন্য কোনো সারের ঘাটতি নেই।’
সারের বাড়তি দামের ব্যাপারে আবু হাসান বলেন, ‘বেশি দামে কেউ সার বিক্রির কথা নয়। আমরা অভিযান চালাচ্ছি। কারও বিরুদ্ধে দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেলে জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। গত কদিনে সাত সার বিক্রেতার কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’