খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত একটি গ্রামের নাম চান্দপাড়া। উপজেলার ১ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এই গ্রামটির অবস্থান। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এই গ্রামে এখনো পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। রয়েছে সুপেয় পানির অভাব। বিদ্যুৎ সংযোগ এবং সুপেয় পানির অভাবে কষ্টকর জীবনযাপন করছেন গ্রামবাসী। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করেও সাড়া পাননি বলে জানান এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের অধিকাংশ ঘর বাঁশ, কাঠ এবং টিন দিয়ে তৈরি। পানির জন্য আশেপাশে নেই কোনো নলকূপ। গ্রামটিতে অন্তত ১ হাজার মানুষের বাস। গ্রামের কয়েকটি পরিবার সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বেশির ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত। এক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে নলকূপ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় তাদের।
এলাকার বাসিন্দা সিরাজ মিয়া (৭০) জানান, এখানকার বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের মত আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। বিদ্যুতের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।
দূরের নলকূপ থেকে পানি নিতে আসা আমেনা বেগম (৩৫) জানান, দৈনন্দিন কাজ গুলোর মাঝে পানি সংগ্রহ তার প্রধান কাজ। পানি না থাকলে ঘরের অন্য কাজ গুলো করা যায় না। গ্রামে পানির কোন উৎস নেই। প্রায় ১ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয় তাঁকে। দৈনিক ২-৩ বার পানি সংগ্রহের জন্য আসতে হয়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আবাসিক প্রকৌশলী আহসান উল্ল্যাহ জানান, কর্মস্থলে তিনি নতুন এসেছেন। তাঁর সময়ে ভুক্তভোগী গ্রাম থেকে কোনো আবেদন আসেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
রামগড় ১ নম্বর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ক্যারি মারমা জানান, এলাকায় বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। খুব দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন বলে আশা করছেন।
রামগড় ১ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম মজুমদার বলেন, এই গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের কথা তিনি জানেন। সমস্যাগুলো সমাধানে প্রকল্পের জন্য এডিপি তে আবেদন করেছেন। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
রামগড় উপেজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব ত্রিপুরা বলেন, ‘চান্দপাড়া গ্রামটি প্রত্যন্ত এলাকায় বিধায় বিদ্যুৎ সংযোগ এবং সুপেয় পানির সুবিধা দিতে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। ব্যক্তিগত অর্থায়নে কয়েকটি টিউবওয়েল দিয়েছি। মাননীয় সাংসদকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে খুব দ্রুত সমাধান করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। বিদ্যুৎ ছাড়া এই গ্রামের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলায় শতভাগ বৈদ্যুতিক সুবিধা দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’