শেরপুরে এতিম শিশুদের নিয়ে পিঠা উৎসব হয়েছে। গত বুধবার শহরের চাপাতলীস্থ সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) জেলা সমাজসেবা অফিসের উদ্যোগে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে শিশু পরিবারের শিশুদের অংশগ্রহণে নাচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সরকারি শিশু পরিবারের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় গত বুধবার রাতে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোমিনুর রশীদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো. হাসান নাহিদ চৌধুরী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুকতাদিরুল আহমেদ, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাসরিন রহমান, প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. শরিফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কোহিনূর বেগম বিদ্যুৎ প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ শেষে শিশুদের নিয়ে পিঠা উৎসবে অংশ নেন অতিথিরা। অতিথিদের সঙ্গে পিঠা উৎসবের পিঠা খেতে পেরে খুশি এতিম শিশুরাও। এ উৎসবে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ভাপা পিঠা, চিতই, গোটা পিঠা, লাভ পিঠা, মোয়া পিঠা, দুধ চিতই, পাটিসাপটা, নারকেল পুলি, দুধ পুলি, পুডিং, পায়েস, কেয়া, মাধবীলতাসহ ৩৩ রকমের বাহারি নামের পিঠা খাওয়ানো ও প্রদর্শিত হয়। এসব পিঠা তৈরি করা হয় শিশু পরিবারেই।
এ অনুষ্ঠানে কথা হয় এতিম শিশুদের সঙ্গে। তারা জানায়, এখানে তাদের বাবা মার মতো আদর স্নেহ দিয়ে বড় করা হচ্ছে। যার উদাহরণ আজকের এই পিঠা উৎসব। শিশু পরিবারে শিশু রুনা আক্তার জানায়, ‘আমি এখানে অনেকদিন থেকেই আছি। আমি দশম শ্রেণির একজন ছাত্রী। এখানে আমরা অনেক ভালো আছি। আজকে আমাদের এখানে পিঠা উৎসব হলো। খুব ভালো লাগছে আজকে। আমরা অনেক পিঠার নাম জানতাম না। আজকে নাম না জানা পিঠাগুলো খেলাম এবং পিঠাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হলাম।’ শিশু পরিবারের শিশু মোছা: সাবিনা ইয়াসমিন জনায়, ‘বাবাকে হারিয়ে সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এখানে ছোট থেকে বড় হয়েছি। এখানে থাকায় বাবার অভাব কখনো বোধ করি নাই। আজ আমাদের পিঠা উৎসব। আজ আমাদের এখানে অনেক বড় বড় লোক আসছে। এতে আমরা খুবই আনন্দিত। শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা বলেন, আমাদের এ শিশু পরিবারের শিশুরা সকল কাজে পারদর্শী। আর আজকে ৩৩ রকমের পিঠা তৈরি করে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা পিঠা তৈরিতেও পারদর্শী।
শেরপুর সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, শেরপুরের শিশু পরিবারটি প্রশাসনের সকল সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আজকে ৩৩ রকমের পিঠা তৈরি হয়েছে এখানে। সুন্দর ও পরিপাটি অনুষ্ঠানটির আয়োজন করার উদ্দেশ্য এতিম শিশুদের বুঝানো তারা অসহায় নয়।
আজকের এই পিঠা তৈরিতে আমাদের শিশুদের অবদান বেশি। শেরপুরের ডিসি মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, এতিম শিশুদের সঙ্গে পিঠা উৎসবে শরিক হতে পেরে আমাদের আসলেই ভালো লাগছে। আমরা তো সবাই নিজের বাড়িতে শীতের পিঠা খেয়েছি। কিন্তু তারা পিঠা খেতে পেরেছে কি না অতটা নিশ্চিত না। আজকের এই পিঠা উৎসবের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে পিঠা খাবে এইটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে।