পানির অভাবে আমন ধানের খেতগুলো ফেটে চৌচির হচ্ছে। তাই সেচের জন্য প্রতিটি ফসলি মাঠে গভীর-অগভীর নলকূপ চালু করা হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের গোপীনাথপুরের কালাইকুড়ি মাঠের একমাত্র গভীর নলকূপটি। মালিকানা নিয়ে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বে এই নলকূপের ঘরে দুটি তালা দেওয়া হয়েছে। ফলে সেচের অভাবে ওই মাঠের ১৮০ বিঘা আমন ধানের খেত নষ্টের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
গভীর নলকূপটি চালু করতে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম হাবিবুল হাসানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কৃষকেরা। লিখিত অভিযোগের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কৃষকেরা এখনো কোনো সুফল পাননি।
ওই দুই ভাইয়ের নাম নিজাম উদ্দিন বুলু ও মামুনুর রশিদ লালু। তাঁরা উপজেলার গোপীনাথপুর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
অভিযোগ সূত্রে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেচকাজের সুবিধার জন্য কালাইকুড়ি ফসলি মাঠে আশির দশকের শেষের দিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। ওই গভীর নলকূপের আওতায় ফসলি মাঠটিতে ১৮০ বিঘা জমি রয়েছে। নাজির উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁর দুই ছেলে নিজাম উদ্দিন বুলু ও মামুনুর রশিদ লালু গভীর নলকূপটি পালাক্রমে পরিচালনা করে আসছিলেন। বড় ভাই নিজাম উদ্দিন দুই বছর ও ছোট ভাই মামুনুর রশিদ দুই বছর করে গভীর নলকূপ পরিচালনা করছিলেন। দুই বছর পর এবার বড় ভাই নিজাম উদ্দিনের গভীর নলকূপ পরিচালনার কথা। কিন্তু ছোট ভাই মামুনুর রশিদ আবারও নলকূপটি চালু করতে যান। এ নিয়ে তাঁদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তাঁরা দুজনেই গভীর নলকূপের ঘরে পাল্টাপাল্টি তালা দেন। এতে সেচকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
কৃষকেরা বারবার অনুরোধ করার পর তাঁরা গভীর নলকূপ চালু করেননি। বর্তমানে সেচের অভাবে আমন ধানখেত ফেটে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার কালাইকুড়ি ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, গভীর নলকূপের ঘরে দুটি তালা ঝুলছে। কিছু ধানখেতে সামান্য বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। বেশির ভাগ জমিতেই পানি নেই। সেগুলো ফেটে গেছে।
কৃষক দোলোয়ার হোসেন বলেন, ওই মাঠে তাঁর দুই বিঘার আমন ধানের খেত রয়েছে। দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের কারণে সেচকাজ বন্ধ রয়েছে। তাঁরা গভীর নলকূপ চালুর ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা সেচ কমিটিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো সুফল পাননি।
নিজাম উদ্দিন বলেন, তাঁরা পৈতৃক সূত্রে গভীর নলকূপটি পেয়েছেন। দুই ভাই পালাক্রমে দুই বছর পরপর গভীর নলকূপটি পরিচালনা করে আসছেন। দুই বছর পর এবার গভীর নলকূপটি তাঁর পরিচালনা করার কথা। কিন্তু তাঁর ছোট ভাই মামুনুর রশিদ এটি তাঁর একক মালিকানা বলে দাবি করেন। এ কারণে নলকূপের ঘরে তালা দিয়েছেন তিনি। তাঁর ছোট ভাইও নলকূপের ঘরে আরেকটি তালা দিয়েছেন।
তবে মামুনুর রশিদ বলেন, তাঁরা পৈতৃক সম্পত্তি বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। গভীর নলকূপটি তাঁর ভাগে পড়েছে। এটি চালু করতে গেলে বড় ভাই মালিকানা দাবি করেন।
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এই ইউনিয়নের প্রতিটি মাঠে গভীর-অগভীর নলকূপ চালু হয়েছে। তবে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বে কালাইকুড়ি ফসলি মাঠের গভীর নলকূপের ঘরে দুটি তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। কৃষকেরা তাঁর কাছে এসেছিলেন। দুই ভাইকে ইউপি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।
ইউএনও এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, গভীর নলকূপে সেচকাজ বন্ধ থাকায় কৃষকেরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে গভীর নলকূপটি চালুর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে এখনো সমঝোতা হয়নি। এর মধ্যে এক ভাই আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এসেছেন বলে জেনেছেন তিনি। এ কারণে এখন আর গভীর নলকূপটি চালু করা যাচ্ছে না।