প্রাইভেটকারচালক বাবার সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। সেই অভাব আর অনটনের পাহাড় ডিঙিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান আবু বকর ছিদ্দিক। তবে তাঁর জীবনে ছিল না কোনো অবসর! টিউশনি করে নিজের পড়াশোনা ও পরিবারকে সহযোগিতা করতে হচ্ছিল সমানতালে। ২০১৭ সালে দুটি টিউশনি নেমে আসে একটিতে। ফলে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি।
ঝরে পড়ার শঙ্কায় আবু বকরের পৃথিবী যখন মেঘাচ্ছন্ন, তখনই পাশে পান ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘পে ইট ফরওয়ার্ড’কে। এই সংগঠন থেকে পাওয়া মাসিক বৃত্তি নিয়ে চালিয়ে যান পড়াশোনা। সেই সুযোগ হেলায় হারাননি আবু বকর। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৬২ এবং ৩ দশমিক ৬৫ পেয়ে হন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। স্নাতকে অনুষদ সেরা ফলের জন্য ২০২০ সালে পান প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকও।
কদিন আগে জীবনের সবচেয়ে বড় সুখবরটি পেয়েছেন আবু বকর। গত মাসের শুরুতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি।
তাঁর বাবা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম নগরে প্রাইভেটকার চালান। তাঁর আয়ে ঠিকমতো চলতো না সংসার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই আবু বকরকে বাসা ভাড়ার অর্ধেক এবং মায়ের আনুষঙ্গিক খরচ দিতে হতো। তাই ক্লাসের শেষে তাঁকে ছুটতে হতো টিউশনিতে। সেখান থেকে ঘরে ফিরে নিজের পড়াশোনার সঙ্গে ছিল দুই ছোট বোনকে পড়ানোর তাড়া।
উচ্ছ্বসিত আবু বকর বলেন, ‘বাবা সারা জীবন পরিশ্রম করেছেন। নিজে পড়াশোনা না করলেও আমাদের পড়াশোনা করিয়েছেন। মায়েরও কষ্ট ছিল। তাঁরা পাশে না থাকলে হয়তো বহু আগেই মাঝপথে ঝরে গিয়ে কোনো চাকরিতে ঢুকে যেতে হতো। পে ইট ফরওয়ার্ড, শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।’
গর্বিত বাবা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার প্রাইভেটকারে যাঁরা চড়তেন তাঁদের অনেককেই দেখতাম উচ্চশিক্ষিত। সেই থেকে আমার মনে স্বপ্ন দানা বাঁধে।’