নওগাঁর রাণীনগরের বড়গাছা ইউনিয়নের রতনডারি খাল দখলের মহোৎসব চলছে। খাল দখল করে কেউ পুকুর খনন করছেন, কেউবা আবার খালের ওপর নির্মিত সেতুর মুখ বন্ধ করে মাছ চাষ করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দখলের মহোৎসব চললেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে, খাল দখলের কারণে বর্ষায় কয়েক শ হেক্টর ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের সলিয়া গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রতনডারি খাল মিলিত হয়েছে রক্তদহ-কাশিয়াবাড়ী খালের সঙ্গে। এলাকার দেউলা, বড়গাছা, পানলা, সলিয়াসহ কয়েকটি মাঠের প্রায় কয়েক শত হেক্টর জমির পানি রতনডারি খাল দিয়ে আত্রাই নদীতে নেমে যায়। কিন্তু খাল দখল করায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে ফসলি জমির পানি নেমে যেতে পারবে না। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাষিরা।
সলিয়া এলাকার বৃদ্ধা মাজেদা বেওয়া (৭৫) বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে এই খালে নৌকা চলতে দেখেছি। এলাকার সব পানি এই খাল দিয়েই নামে। কিন্তু পুকুর খনন, বাঁধ নির্মাণ করায় পানি আর নামতে পারবে না।’
স্থানীয় বাসিন্দা জগদীশ চন্দ্র, সালেহ আহম্মেদ, কার্তিক দাসসহ বেশ কয়েকজন বলেন, সাত-আটটি গ্রামের মাঠের পানি রতনডারি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আত্রাই নদীতে নেমে যায়। যেভাবে খাল দখল করা হচ্ছে তাতে ভারী বৃষ্টি হলে এক ফোঁটা পানিও নিষ্কাশন হতে পারবে না। এতে শত শত হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলে নষ্ট হয়ে যাবে।
খাল দখল করে পুকুর খননকারী মাসুদ রানা বাবু বলেন, ‘খাল ঘেঁষে পুকুর খনন করেছি। কিন্তু পুকুর ও খালের পাড়ের মাটি বিভিন্ন লোকজন কেটে নিয়ে গেছে। এতে পুকুর আর খাল একাকার হয়ে গেছে।’
খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণকারী আক্তার হোসেন বলেন, ‘খালের দক্ষিণে বাড়ি। চলাচলের জন্য একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেও ফল মেলেনি। বাধ্য হয়ে চলাচলের জন্য খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করেছি।’
সেতুর মুখ ভরাট করে মাছ চাষ করছেন আব্দুর রশিদ। কথা হলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই খাল ভরাট করে নেওয়ায় খালে আর নৌকা চলতে পারবে না। তাই সেতুর মুখ সামান্য ভরাট করে মাছ চাষ করছি।’
উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা পারভিন বলেন, ‘দখলকারীরা সবাই গ্রামের লোক। নিষেধ করতে গেলে দ্বন্দ্ব হতে পারে। দ্বন্দ্ব এড়াতে তাঁদের নিষেধও করতে পারিনি বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেও জানাইনি।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজার রহমান বলেন, সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।