হোম > ছাপা সংস্করণ

মুরাদ-কাণ্ডের পর অস্বস্তিতে নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মুরাদ হাসানেই শেষ, না সামনে আরও আসছে? এমন প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে সরকারি দলের ভেতরে। ফলে দলের মধ্যে কেউ অস্বস্তিতে, কেউ আতঙ্কে, আবার কেউ একে আশীর্বাদ হিসেবে মনে করছেন। চিন্তিতদের চিন্তার প্রধান কারণ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিদায়ে ফোনালাপে কু-কথা বলাই একমাত্র কারণ না অন্য কিছু আছে। আর এসব বক্তব্য ফাঁস হচ্ছে কীভাবে তা নিয়েও চিন্তা বাড়ছে।

বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বেশ কিছু নাম শোনা যাচ্ছে। অন্তত তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আলোচনায় আছেন। আছেন একাধিক দলীয় নেতা। আর মুরাদ-কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ সরকার ও দলে বেশ কিছু প্রভাবশালীর মন্ত্রী ও নেতার চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। দলের মধ্যে আরেক পক্ষ এই অশ্লীল বক্তব্য দানকারী ও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া নেতাদের দলের বোঝা হিসেবেই মনে করছেন। বিশেষ করে নারীদের প্রতি যাঁদের কথাবার্তায় বিন্দুমাত্র সম্মান বোধ নেই, তাঁদের মতো এই ধরনের নেতার যত তাড়াতাড়ি বিদায় দেওয়া যায়, ততই দলের মঙ্গল।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন প্রতিমন্ত্রীর ফোনালাপ ফাঁস হওয়াটা খুবই অপ্রীতিকর। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’

দেশের রাজনীতিতে ফোনালাপ ফাঁস নতুন কিছু নয়। অতীতে অনেক রাজনৈতিক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। যার মধ্যে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সে সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ফোনালাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত আইনজীবী মওদুদ আহমদ এবং রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানের ফোনালাপ, বিএনপির নেতা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার আলাপ, ভিকারুননিসা নূন কলেজের অধ্যক্ষের ফোনালাপ, মামুনুল হকের ফোনালাপ, যশোর-৬ আসনের সাংসদ শাহীন চাকলাদারের ফোনালাপ, ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের ফোনালাপ, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের ফোনালাপ রয়েছে।

মুরাদ হাসানের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও সাংসদদের। বিশেষ করে যাঁদের নানা বিষয়ে দুর্বলতা আছে। গোয়েন্দা সংস্থাসহ নানা দপ্তরে কাছের সোর্স পাঠিয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে নেতাদের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা আমরা দেখেছি। কিন্তু কারও ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা তেমন দেখা যায়নি। ব্যক্তিগত আলাপ ফাঁস হওয়া অপরাধ। যাঁরা ফাঁস করেছেন, তাঁদের শাস্তি হওয়া দরকার।’

বিষয়টি নিয়ে সরকারের পাঁচজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়। যাঁদের অধিকাংশই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না। দুজন বলছেন, ‘আমরা রাজনীতি করি। অনেক সময় অনেক কথা বলি রাজনীতির প্রয়োজনে। স্পর্শকাতরও কিছু থাকতে পারে। সেটা ফাঁস হয়ে যাওয়া আমাদের জন্য বিব্রতকর। এখন কথা বলতে আমাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।’

দুজন নেতা বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোনে কোনো কথাই বলতে চাননি। তাঁরা বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমরা মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি না। প্রয়োজন হলে অ্যাপসে কথা বলি। কিন্তু অতীতে নিজের অজান্তে কিছু বলে থাকলে, সেটা ফাঁস হলে খুবই বিব্রতকর হয়ে যাবে। তাই সরকারের উচিত এগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তা করা।’

মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে মন্তব্য চাইলে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরামর্শ দেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত জীবন আছে। বন্ধুবান্ধব রয়েছে। তাদের আমরা অনেক কথা বলে থাকি। সেখানে হাসি-ঠাট্টা এমনকি গালিগালাজ করি। এখন তো মনে হচ্ছে সেগুলো কখন না জানি ফাঁস হয়ে যায়। এটা সভ্য কোনো কাজ হতে পারে না। রাষ্ট্রবিরোধী কথা বললে সেটা দেশ ও জাতির স্বার্থে ফাঁস করা যেতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের কথোপকথন ফাঁস করা মানে হলো রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করা। সেটা কখনোই উচিত না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মানুষ কথায় কথায় দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। সেটাকে বেশির ভাগ মানুষই ঢালাও বলে মনে করে। কিন্তু দেশ ও সমাজের চোখে ব্যক্তির চারিত্রিক উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটু পিছলে গেলে সমাজ খুব খারাপভাবে দেখে। এতে ব্যক্তি, পরিবার ও দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তবে মুরাদ হাসানের ঘটনা সবাইকে সাবধান হওয়ার বার্তা দিয়েছে বলে মানছেন সবাই। ‘হানি ট্র্যাপ’ বা রোমান্স কিংবা যৌনতার আশ্বাসে ফাঁদে ফেলা শব্দটিও রাজনীতির মাঠে প্রচলিত আছে বলে মনে করিয়ে দেন মন্ত্রিত্ব না পাওয়া ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতা।

আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘আজকে এই (তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী) বিষয়টা ফাঁস হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যদি ফাঁস হয়ে যায়, তখন কী হবে? প্রযুক্তির বিষয়ে আমাদের আরও ভাবা উচিত।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁর (মুরাদ) ঘটনাটিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে নিতে পারি। তা শুধু বাচনভঙ্গি নয়, অশ্লীল কথা কিংবা কাজ—সবকিছু হতে। সবাইকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’

২০০৬ এবং পরে ২০১০ সালে টেলিকমিউনিকেশন আইনকে সংশোধন করে নাগরিকদের টেলিফোন রেকর্ড করার অবাধ ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়। আইনের ৯৭ ক ধারামতে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে যেকোনো টেলিযোগাযোগ রেকর্ড করার ক্ষমতা দিতে পারবে বলা হয়। এ কাজে টেলিযোগাযোগ সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সহায়তা না করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে ফোন রেকর্ড করার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে।

আড়ি পাতা রোধে এবং ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ঘটনা কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন ১০ জন আইনজীবী। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ