মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার আলীনগর-মুড়ইছড়া সীমান্তে বেড়েছে অনুপ্রবেশ। গত এক মাসে উপজেলার পৃথিমপাশার শিকড়িয়া সীমান্তে ২১ জন আটক হন। তাঁদের মধ্যে রোহিঙ্গা ছিলেন ১৮ জন। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করিয়ে জনপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা নিচ্ছে মানব পাচারকারী চক্রটি।
স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার পৃথিমপাশার আলীনগর ও কর্মধার মুড়ইছড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বিওপি ক্যাম্পের ১৮৪২-১৮৫১ নম্বর সীমানা পিলার দিয়ে দীর্ঘদিন স্থানীয় একটি চক্র মাদক, ভারতীয় পণ্য, গরুর চোরাচালান করে আসছে। এ সবের পাশাপাশি মানব পাচারেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে এ চক্র।
জনপ্রতি দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে মুড়ইছড়া ও আলীনগর ক্যাম্পের ১৮৪২-১৮৫১ সীমান্ত পিলারের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে মানুষ পাচার করা হচ্ছে। এসব সীমান্তবর্তী এলাকা গহিন হওয়ায় ওই চক্রের আধিপত্যও বেশি। এক বছর ধরে জনপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করাচ্ছে চক্রটি।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, গত এক বছরে দুই দফায় অনুপ্রবেশকারী শিশুসহ ৩৯ রোহিঙ্গা মৌলভীবাজারে আটক হয়। আটক রোহিঙ্গারা জানান, তাঁরা কুলাউড়ার পৃথিমপাশার শিকড়িয়া সীমান্ত দিয়ে স্থানীয় মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম (৩৫), সুমন মিয়া শোভন (৩৪), জসিম মিয়া ও আরজদ বিজিবির তালিকাভুক্ত চোরাকারবারি চক্রের মূল হোতা। এক বছরে দুই দফায় আটক ৩৯ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে এই চক্রের সদস্যরা জড়িত বলে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া যায়। এমনকি এই চক্র অনুপ্রবেশ করিয়ে নিজস্ব পরিবহন দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর কাজ করেন তাঁরা।
গত ১২ মে মৌলভীবাজার শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শিশুসহ ১৮ রোহিঙ্গা সদস্যকে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর সহযোগিতায় আটক করে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা-পুলিশ। এ ছাড়া গত ২৫ মে শিশুসহ এক নারী ও ৩ জুন ভারতীয় এক যুবককে আটক করে পুলিশে দেন বিজিবি-৪৬ ব্যাটালিয়নের আলীনগর ক্যাম্পের সদস্যরা। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়।
গত ২১ মে শিকড়িয়ার চক্রের ফরিদ আলী ও আবুল কালামকে ভারতীয় মদসহ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনায় নড়েচড়ে বসে বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিজিবি-৪৬ ব্যাটালিয়নের (শ্রীমঙ্গল) কার্যালয়ের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিজানুর রহমান শিকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, মৌলভীবাজারে আটক রোহিঙ্গারা পৃথিমপাশার শিকড়িয়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছেন কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে তাঁরা জেলার যেকোনো সীমান্ত দিয়েই প্রবেশ করেছেন। সীমান্তে রোহিঙ্গাসহ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ওই এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখছে বিজিবি। এখন থেকে সীমান্ত দিয়ে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করলে তাঁদের পুশব্যাকের নির্দেশনা রয়েছে।