স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষ, মুক্তিযোদ্ধাদের দারুণভাবে উজ্জীবিত করে রেখেছিল। ২৬ মার্চ এই বেতার কেন্দ্রটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটে গড়ে ওঠে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এই কেন্দ্রের কর্মীরা জানতেন-ই না, যেদিন এই বেতার কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হলো, সেদিনই দেশের স্বাধীনতা দিবস। ওই দিন এই বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত না হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ই হয়তো হয়ে উঠত অন্য রকম। কারণ, এই কেন্দ্রই সেদিন হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিরোধের কথা ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঘোষণা শুনেই নিরস্ত্র বাঙালি আশায় বুক বাঁধত।
কালুরঘাট থেকে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে একসময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অবস্থান হয় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। সেখানেই অন্য অনেক অনুষ্ঠানের মধ্যে নেতাদের ভাষণ প্রচারিত হতো। এর মধ্যে কর্নেল আতাউল গণি ওসমানীর সুদীর্ঘ ইংরেজি ভাষণ প্রচার হয়েছে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলীর ভাষণও প্রচারিত হলো।
তাজউদ্দীন আহমদের কণ্ঠস্বর ভরাট; কিন্তু তাতে কণ্ঠের ওঠানামা নেই। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনলেই বোঝা যায়—কণ্ঠের ওঠানামা দিয়ে কীভাবে তিনি মানুষের মন জয় করে নিতেন। তাজউদ্দীন আহমদ নিজেই নিজের কণ্ঠস্বর শুনে হতাশ হলেন। তিনি বললেন, ‘আপনাদের হয়তো কষ্ট হবে; কিন্তু আরেকবার কি আমার ভাষণ রেকর্ড করতে পারেন? আমি তাজউদ্দীনের অযোগ্যতার জন্য যেন আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর দুর্নাম না হয়।’
তাজউদ্দীন আহমদ নিজেই লিখে এনেছিলেন নিজের ভাষণের পাণ্ডুলিপি। রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর বেলাল মোহাম্মদ পাতাগুলো গুছিয়ে দিতে গেলেন। তাজউদ্দীন আহমদ বললেন, ‘আমাকে দিন। আপনারা পারবেন না। আপনারা অফিসার মানুষ। এটা হচ্ছে দপ্তরির কাজ। এ কাজে আমিই পটু। লিডার আমাকে দিয়ে সব সময় এই কাজ করিয়েছেন।’ বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ তুলেই তাজউদ্দীন আহমদ কেঁদে ফেললেন।
সূত্র: বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস, চতুর্থ খণ্ড, প্রথম পর্ব, পৃষ্ঠা: ২৩৪