একেবারে ছেলেবেলায় মকসুদ-উস-সালেহীন, বজলুল করিমদের ড্রামা সার্কেলের নাটকের মহড়া দেখতেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। পল্টনে নাসির উদ্দীনদের বাড়ির দুটো বাড়ি পরেই ছিল ড্রামা সার্কেলের বজলুল করিমের বাড়ি। সেই বাড়ির সামনে ছোট্ট কাঠের একটা বাংলো ছিল, সেখানেই চলত মহড়া। তন্ময় হয়ে যখন তাঁদের মহড়া দেখতেন, তখন নাসির ভাবতেন, থিয়েটার খুব কঠিন ব্যাপার এবং প্রচুর পড়াশোনার ব্যাপার।
একবার গ্রীষ্মাবকাশে গেছেন চট্টগ্রামে বেড়াতে। সেখানে তাঁর চাচাতো ভাই ছিলেন শিক্ষক, নাটক-অন্তপ্রাণ। অভিনেতা-নির্দেশক হিসেবে ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত তাঁর নামডাক ছিল। সে সময় তিনি ‘টিপু সুলতান’ নাটকটি করছিলেন। নাসির উদ্দীন ইউসুফ তখন পড়তেন ক্লাস টুতে। তাঁকে মাথায় পাগড়ি পরিয়ে টিপু সুলতানের এক ছেলের চরিত্রে নামিয়ে দিয়েছিলেন কাশেম মাস্টার। সেটাই নাটক করার প্রথম অভিজ্ঞতা।
ড্রামা সার্কেলের কোনো নাটক দেখা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবতেন তিনি। সে সময় ড্রামা সার্কেল মঞ্চস্থ করছে বনফুলের ‘কবর’ নাটকটি। তাদের টেকনিক্যাল শো দেখতে গিয়েছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, একা একা। নাটকটি মঞ্চে দেখবেন বলে ইচ্ছে প্রকাশ করলেন তিনি।
বজলুল করিম বললেন, ‘দেখতে যেতে পারো, কিন্তু তার আগে বাবা-মার পারমিশন নিয়ে এসো। তা না হলে সন্ধ্যার পর থাকবে কেমন করে?’
কথা ঠিক। বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়েই সে নাটক দেখতে গিয়েছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
১৯৬৪ সালে শিক্ষা আন্দোলনের সময় পুলিশের মার খেয়েছিলেন নাসির। ৬ দফা আন্দোলনে শেখ মুজিবের ক্যারিশমা বুঝেছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন জগন্নাথ কলেজে। সে সময় একদিন সালাউদ্দিন জাকী তাঁকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘তুমি র্যাবো পড়েছ? বালজাক পড়েছ? ভিক্টর উগো পড়েছ? ইয়েটস পড়েছ? হেগেল পড়েছ?’
সবগুলোর উত্তরই ছিল ‘না।’
‘তাহলে তো কিছুই পড়নি। তুমি কী করে কী করবে?’
সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হলো বেশি করে সে সময় থেকেই। আর সময়টা তো আন্দোলনের। আন্দোলন নিজেই তো গড়ে নেয় তাদের সন্তানদের।
সূত্র: হাসান শাহরিয়ার সম্পাদিত থিয়েটারওয়ালা