আমনের পর বোরো ধান চাষের জন্য জমি ফেলে রাখতেন তারাগঞ্জের সয়ার ইউনিয়নের আলমগীরের বাজার গ্রামের কৃষক আরিফ হাসান। তবে এ বছর জমি ফেলে না রেখে ‘বিনা সরিষা-৯’ চাষ করেছিলেন। বোরোর চারা রোপণের আগেই খেত থেকে সেই সরিষা ঘরে তুলেছেন।
আরিফ হাসান বলেন, ‘জমি আগে খালি পড়ি আছলো। এবার সরিষা লাগিয়েছিলাম। সরিষা তুলি আবার বোরো ধান লাগার পাওছি। খরচ তেমন হয় নাই। ফলন ভালো হইছে। ৯ বিঘা জমিতে ৫৫ মণের বেশি সরিষা পাব।’
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জের ইকরচালী, হাড়িয়ারকুঠি, সয়ার, আলমপুর ও কুর্শা ইউনিয়নে এ বছর ৬৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এবারই প্রথম মাঠ পর্যায়ে বিনা সরিষা-৯ চাষিদের আবাদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। স্বল্প জীবনকালের এ সরিষা চাষে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
প্রামানিকপাড়া গ্রামের জিয়া প্রামানিক এবার দুই বিঘা জমিতে বিনা সরিষা-৯ লাগিয়েছিলেন। সেই সরিষা তুলে তিনি এক সপ্তাহ আগে বোরো চাষও শুরু করেছেন।
জিয়া প্রামানিক বলেন, দেশে যে হারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে তাতে কৃষকদের সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়া উচিত। যেখানে পরিবারে মাসে চার লিটার সয়াবিন তেল প্রয়োজন সেখানে সরিষার তেল দুই লিটার হলেই হয়ে যায়। তাই আমন ধান কাটার পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করা উত্তম। এ ফসল খেত থেকে তুলে আগাম বোরো ধান রোপণ করা যায়। আর সরিষায় খরচ কম, রোগবালাই নেই, লাভও বেশি।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্প জীবনকালের সরিষার একটি জাত বিনা সরিষা-৯। এর প্রচার ও চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার শ্যামগঞ্জ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে শতাধিক কৃষককে নিয়ে মাঠ দিবস ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজস্ব খাতের অর্থায়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মাঠ দিবসটি বাস্তবায়ন করে বিনার রংপুর উপকেন্দ্র। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোতাব্বের রহমান, মাহামুদুল হাসান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাসসুম, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিতাউর রহমান মিতু প্রমুখ।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, বিনা সরিষা-৯-এর দানায় ৪৪ ভাগ তেল পাওয়া যায়। ফসল ৯০ দিনের আগে কর্তন করে ঘরে তোলা যায়। বাজারে এ তেলের দাম বেশি। আমন ও বোরোর মাঝামাঝি চাষ হয় এটি। আগে বিঘায় দুই থেকে তিন মণ করে সরিষা হতো কিন্তু এখন ছয় থেকে সাত মণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাসসুম বলেন, কীভাবে খরচ কমিয়ে অধিক ফসল উৎপাদন করে বেশি লাভ করা যায়, সরকার সেই চেষ্টাই করছে। সয়াবিন তেলের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে সরিষার বিকল্প নেই। প্রতি বিঘা সরিষা চাষে কৃষকের ব্যয় হবে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর এক বিঘায় ছয় মণ পর্যন্ত সরিষা পাওয়া যায়। প্রতিমণ সরিষা বাজারে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।