তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তারাগঞ্জে ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। শেষ মুহূর্তে এসে প্রচারে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো উপজেলা। ভোটারদের নিজের পক্ষে টানতে কোনো কমতি রাখছেন না প্রার্থীরা। তাঁদের চোখে এখন ঘুম নেই। দিনে ঘরে ঘরে গিয়ে আর রাতে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তাঁরা ভোট প্রার্থনা করছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জের পাঁচ ইউপি নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান পদে ৩০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাঁচজন করে, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জাসদের একজন করে এবং ১৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। আর সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭১ ও সাধারণ সদস্য পদে ১৭৮ প্রার্থী রয়েছেন।
গতকাল বুধবার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, প্রার্থীরা কখনো দলীয় পরিচয়ে আবার কখনো নিজের পরিচয় দিয়ে ভোট চাইছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা আত্মীয়স্বজন ও কর্মীবাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছেন। দিনব্যাপী জনসংযোগের পর রাতে ফোন করেও ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন।
ইকরচালী ইউনিয়নের পোদ্দারপাড়া গ্রামের ফজলু মিয়া বলেন, ‘ভোট আসি হামারও খরচ বাড়ছে। প্রতিদিন সাগাই সোদোর বাড়ি আসি প্রার্থীর জন্য ভোট চাওছে। তাক নাশতা পানি খিলার নাগে। মোবাইল নম্বর নিয়াও যাওছে। রাইতোত মোবাইল করি ভোট চাওছে। দিন দিন এলাকাত প্রার্থীর লোজনের ভিড় বাড়োছে।’
প্রচারের বিড়ম্বনায় পড়েছেন আমলপুর ইউনিয়নের দোয়ালীপাড়া গ্রামের মেশন মিয়া। তিনি জানান, দিনে ঘরে ঘরে, আর রাতে ফোনে প্রার্থীর লোকজন ভোট চাচ্ছেন। কথা নিচ্ছেন ভোট তাঁদের প্রতীকে দেবেন কি না। এই ভোট শেষ হলে আর কেউ ফোন করবেন না, কখনো খোঁজও নেবেন না। আবার পাঁচ বছর পর তাঁরা ভোটারদের কাছে ধরনা দেবেন।
হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের বৃদ্ধ মানিক মিয়া বলেন, ‘দিনে রাইতর পায়ে হাটি, মোটরসাইকেলোত বাড়ি বাড়ি আসি প্রার্থীর ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ভোট চাওছে। এক প্রার্থী বাড়ি ঢোকোছে, ওই সময় আরেক প্রার্থীর লোক মোবাইলোত কল দিয়া নিজের মার্কাত ভোট চাওছে। কদ্দিন যে ভোটটা দিয়া উদ্ধার হবার পাই।’
একই ইউনিয়নের নারায়ণজন গ্রামের গৃহবধূ সুলতানা খাতুন অভিযোগ করেন, মাইকিংয়ে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। তাঁর ওপর গভীর রাতে বাড়িতে আসে কপাট ঠেলছে। সুলতানা আক্ষেপ করে বলেন, ‘হামরা তো সরল মনে ভোট দেই। কিন্তুক ভোট শেষ হইলে ওমরা তো হামাক ভুলি যায়। হামার কোনো উন্নয়ন করে না।’
একই আক্ষেপের সুর শোনা গেল সয়ার ইউনিয়নের ফরিদাবাদ গ্রামের গৃহবধূ আকলিমা বেগমের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘ভোটের আগোত তো সোবায় হামার উন্নয়নের কথা কওচে। কিন্তু ভোটের পর মেম্বার চেয়ারম্যান হইলে চোখ উল্টি ফেলায়। সমস্যার কথা কইলে শোনে না। এখন রাত দুপুরে বাড়িত আসি চাচা, ভাই সম্বন্ধ জোড়ে দেওছে। ঘরোত বসি ভাত খাওচে।’
তবে প্রার্থীদের এমন প্রচারেও প্রভাবিত হচ্ছেন না কুর্শা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের লাকী বেগম। তিনি জানান, যাঁকে যোগ্য মনে হবে তাঁকেই তিনি ভোট দেবেন।
কথা হয় একই ইউনিয়নের ভোটার জালাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দিন-রাইত হাটবাজার, বাড়ি-ঘরোত ঢুকি ভোট চাওছে। রাইতোত ভোটের জন্যে মোবাইলো দেওচে কায়ও কায়ও।’