গত মৌসুমে হিমাগারে আলু রেখে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েন জয়পুরহাটের কৃষকেরা। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আবারও আলুর দিকেই ঝুঁকেছেন তাঁরা। আগাম জাতের আলু পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করেছেন চাষিরা।
সদর উপজেলার কোমড় গ্রামের কৃষক তসলিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে জানান, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। এর মধ্যে তিন বিঘায় আগাম জাতের ও দুই বিঘা জমিতে বিলম্ব জাতের আলু চাষ করেছেন। ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতি বিঘায় খরচ পড়বে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার বিঘাপ্রতি দুই হাজার টাকা বেশি খরচ গুনতে হবে।
একই গ্রামের কৃষক নুরুন্নবী বলেন, তিন বিঘা জমিতে আলু রোপণ করেছি। এর মধ্যে দেড় বিঘা জমিতে আগাম জাতের এবং দেড় বিঘা জমিতে বিলম্ব জাতের আলু আছে। গেল মৌসুমে হিমাগারে আলু রেখে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এবার ন্যায্য মূল্য না পেলে পথে বসতে হবে।
সদর উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের কৃষক আরমান আলী জানান, ভালো ফলন ও ভালো দাম পাওয়ার আশায় এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। কৃষকদের স্বার্থে আলু আমদানি বন্ধ ও বিদেশে আলু রপ্তানির জন্য পদক্ষেপ নিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, জেলায় এবার আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। কৃষকেরা এবার আগাম জাতের মধ্যে মিউজিকা, কুমারিকা, গ্রানোলা, ফ্রেশসহ অন্যান্য জাতের আলু চাষ করেছেন। আর উন্নত জাতের মধ্যে অ্যারিস্ট্রিক, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, লরা ও ক্যারেজ এবং দেশি জাতের মধ্যে পাকরি, পাহাড়ি পাকরি, বট পাকরি, তেল পাকরি, ফাটা পাকরি, রোমানা ও জাম জাতের আলু চাষ হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, জেলা সদরসহ পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলার কৃষকেরা এখন আগাম জাতের আলুখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁরা কোদাল দিয়ে নিড়ানি দিচ্ছেন। এবং আলুর আইল বাঁধাই করছেন। কেউ কেউ রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সদরসহ জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। আলুর রোগ-বালাই দমনে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে সার ও ওষুধ প্রয়োগের জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখন আবহাওয়া বেশ ভালো, শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে এবার আলুর বাম্পার ফলন পাবেন কৃষকেরা।