হোম > ছাপা সংস্করণ

সংকট মোকাবিলায় ইউসুফ (আ.)-এর কর্মপন্থা

ইজাজুল হক, ঢাকা

হজরত ইউসুফ (আ.) তখন মিসরের জেলে বন্দী। মিসরের বাদশাহ এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলেন। রাজ্যের সভাসদ-বুদ্ধিজীবীদের কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাইলেন। তাঁরা বললেন, ‘নিতান্ত কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন।’ পরে ইউসুফ (আ.)-এর কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হলো। তিনি জানালেন, রাজ্যে কিছুদিন পর কঠিন দুর্ভিক্ষ হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাতে নিতে হবে। এ ব্যাখ্যা বাদশাহর পছন্দ হলো। তিনি তাঁকে মুক্তি দিলেন এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলেন। সেই সংকটকালে ইউসুফ (আ.) যে অনুপম দক্ষতায় পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন, তা আমাদের জন্য শিক্ষার উপাদান হতে পারে।

স্বেচ্ছায় দায়িত্ব গ্রহণ 
প্রথমেই তিনি অদক্ষ কর্তাদের ব্যর্থতা থেকে দেশকে বাঁচাতে প্রয়াসী হন এবং আল্লাহর আদেশে বাদশাহর কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদের আবেদন করেন। আসন্ন বিপদ থেকে জনগণকে রক্ষা করতে তাঁর বিকল্প ছিল না বাদশাহর কাছে। কারণ, তিনি ছিলেন আল্লাহর নবী এবং বিশ্বস্ততম ব্যক্তি। পবিত্র কোরআনের ভাষায়—‘আপনি আমাকে দেশের ধনভান্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও বিজ্ঞ।’ (সুরা ইউসুফ: ৫৫)

সর্বোচ্চ উৎপাদন
দায়িত্ব নিয়েই তিনি সর্বোচ্চ খাদ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রকল্প হাতে নেন। যেমনটি তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যার সময় বলেছিলেন—‘তোমরা সাত বছর একাধারে চাষ করবে।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৭)

দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ 
এরপর শস্য গুদামজাত করেন এবং দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ইউসুফ (আ.)-এর ভাষায়—‘এরপর যখন তোমরা ফসল কাটবে, তখন তোমরা অল্প যা খাবে তা ছাড়া বাকি শস্য শিষসমেত সংরক্ষণ করবে।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৭)

অপচয়-অপব্যয় রোধ
আয়াতে ‘তোমরা অল্প যা খাবে তা ছাড়া বাকি শস্য’ বলার মাধ্যমে ইউসুফ (আ.) ভোক্তাদের মধ্যে অপচয়-অপব্যয় কমিয়ে আনার কথা বলেছেন। উৎপাদন থেকে কম খরচ করে বিপদের সময়ের জন্য সঞ্চয় করতে বলেছেন।

সুষম ও পরিকল্পিত বণ্টন
ইউসুফ (আ.)-এর সতর্কতা জারির কারণে মিসরের মানুষ দুর্ভিক্ষের জন্য ফসল সঞ্চয় করে রাখে এবং দুর্ভিক্ষের সময় নিজেদের সঞ্চিত ফসল খেতে থাকে। এরশাদ হচ্ছে, ‘এরপর সাতটি কঠিন বছর আসবে। এ সময়ের জন্য আগে তোমরা যা সঞ্চয় করেছিলে, তা লোকে খাবে।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৮) রাজভান্ডারে সঞ্চিত ফসলগুলো পরিকল্পিতভাবে অভাবীদের মধ্যে বণ্টিত হতে থাকে। ফলে মিসরের মানুষের তেমন কোনো দুর্ভোগ ছিল না। বরং পাশের ফিলিস্তিনসহ অন্যান্য অঞ্চলের মানুষও মিসর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা এ উদ্দেশ্যেই মিসরে এসেছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে, দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ইউসুফ (আ.)-ই প্রথম রেশন কার্ডের ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। ইউসুফ (আ.) নিজেই দুর্ভিক্ষকালীন কর্মকাণ্ডগুলো তদারক করতেন। সুরা ইউসুফের পাঠ থেকে আমরা তা-ই বুঝতে পারি।

দুর্ভিক্ষের পরের সময়ের জন্য পরিকল্পনা
দুর্ভিক্ষের পরের সময়ের জন্য যথেষ্ট বীজও সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। এরশাদ হচ্ছে, ‘তবে সেই অল্পটুকু বাদে, যা তোমরা (বীজ হিসেবে) সংরক্ষণ করবে।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৮) ফলে দেখা গেছে, দুর্ভিক্ষের পর এতই ভালো ফলন হলো যে মানুষ খুব সুখে জীবনযাপন করতে লাগল। কোরআনের ভাষায়—‘এরপর একটি বছর আসবে, যখন মানুষের কল্যাণে প্রচুর বৃষ্টি হবে এবং মানুষ যথেষ্ট ভোগ-বিলাস করবে।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৯)

সুরা ইউসুফকে আল্লাহ তাআলা ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ আখ্যা দিয়েছেন। তাতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ