বয়স ৫৫ বছর। চল্লিশ বছর ধরে তালা-চাবি মেরামতের কাজ করেন শামসুল ইসলাম। সেই উপার্জন দিয়েই চলছিল তাঁর সংসার। আগে ভালোভাবেই দিন যেত। এখন বয়স বেড়েছে। সংসারের খরচ বেড়েছে। তবে আগের মতো কাজ করতে না পারায় উপার্জন কমেছে।
শামসুল ইসলামের বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামে। স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়েই তাঁর সংসার। বড় ছেলে বেকার। মাঝেমধ্যে অন্যের বাড়িতে মজুরি খাটেন। ছোট ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তালা-চাবি মেরামতের টাকা দিয়েই চলে তাঁদের ভরণপোষণ।
শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে তালা-চাবি মেরামতের কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তালাচাবি নষ্ট হলে, মেরামত করে দিই। বিনিময়ে যে টাকা রোজগার হয়, তা দিয়েই সংসার চলে। আগে সংসার ছোট ছিল। রোজগার হতো বেশি। এখন বয়স বেড়েছে। রোজগার কমে গেছে। কিন্তু সংসারের খরচ বেড়েছে। তাই এখন যে রোজগার হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।’
শামসুল ইসলাম আরও জানান, জয়পুরহাট সদর উপজেলার নতুনহাট, জামালগঞ্জ ও ভাদসা হাটবাজারে তিন দিন কাজ করেন। প্রতি হাটে ১০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি রোজগার করতে পারেন না। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেশি। সামান্য রোজগারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। তাই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। শেষ বয়সে ঋণের কিস্তির চাপে পড়ে জীবন বিষিয়ে উঠেছে। আর এভাবেই বেঁচে আছেন তিনি।
শামসুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘এ জীবনে হাজারো মানুষের নানা সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু নিজের সংসারজীবনের যে সংকট, যে সমস্যা; তার সমাধান করতে পারলাম না। সংসারে এখন অভাব-অনটন লেগেই থাকে। এ বয়সে এসে আমি অন্য কোনো কাজও ভালোভাবে করতে পারি না। জীবনের ঘণ্টা বেজে উঠলে মরণেই যেন এ কষ্টের সমাধান।’