‘সমতার বাংলাদেশ, এইডস ও অতিমারি হবে শেষ’ এই প্রতিপাদ্যে রাজবাড়ীতে বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজবাড়ী সিভিল সার্জনের সম্মেলন কক্ষে গতকাল বুধবার আলোচনা সভা হয়।
সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিপক কুমার বিশ্বাস ও বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা। সভায় বক্তারা বলেন, রাজবাড়ী এইডসের দিক থেকে উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। কারণ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়াতে বড় একটা যৌনপল্লি রয়েছে।
এদিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে মরণঘাতী এ রোগ নিয়ে তেমন কোনো উৎকণ্ঠা না থাকলেও এখানকার যৌনকর্মী, খদ্দেরসহ যৌনপল্লি সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫ হাজার মানুষ রয়েছেন চরম ঝুঁকির মধ্যে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যৌনপল্লিতে তালিকাভুক্ত যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৫২৬, তাঁদের বাবুর সংখ্যা ৫৬২, বাড়িওয়ালি ২৮১ এবং যৌনকর্মীদের শিশুর সংখ্যা ৬৫৩ জন। এর বাইরেও বয়স্ক নারী ও ব্যবসায়ী মিলে আরও প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস এ পল্লিতে। অর্থাৎ যৌনপল্লির প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দা যাঁরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এইচআইভি এইডসসহ নানাবিধ যৌনরোগের চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সরেজমিন যৌনপল্লির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পুরুষ এ পল্লিতে যাতায়াত করে। এর মধ্যে স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আসা ট্রাকচালকেরাও রয়েছে। যার বেশির ভাগ লোকজন দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনাগ্রহী। খদ্দরের ইচ্ছা ও বেশি টাকার লোভে বেশির ভাগ মেয়েই প্রতিনিয়ত অনিরাপদ মিলন করে থাকে। এ ছাড়া পল্লির বহু মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তাদের আয়-রোজগার কম। নেশার টাকা জোগানো, খাবার ও ঘর ভাড়ার টাকা জোগাতে এ সব মেয়েরা দৈহিক মিলনে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করার সুযোগ পায় না। এ ছাড়া কিছু মেয়ে রয়েছে বাড়িওয়ালাদের কাছে জিম্মি। যার ফলে দৈহিক মিলনে তাদেরও নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবার সুযোগ নেই।
পায়াক্ট বাংলাদেশ দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মজিবর রহমান জুয়েল জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে তাঁরা এখানে এইচআইভি এইডস বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন। পাশাপাশি তাঁরা ২ জন অভিজ্ঞ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের (কাউন্সিলর) মাধ্যমে নানাবিধ যৌনরোগ শনাক্ত এবং বিনা মূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা প্রতি মাসে যৌনজীবীদের মাঝে প্রায় দেড় থেকে পৌনে ২ লাখ কনডম বিনা মূল্যে বিতরণ করছেন। সচেতনতা বাড়াতে প্রতিদিন উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করছেন। তবে যৌনজীবীদের নানাবিধ ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে কর্মসূচিগুলোর সুফল পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন, এইডস ও অন্যান্য যৌন রোগের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগ এ পল্লিতে কাজ করছে।
এইডস দিবসে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পায়াক্ট বাংলাদেশ দৌলতদিয়া ঘাট শাখার পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা ও সভা হয়েছে।