প্রচলিত ভাবনায় নায়ক বলতে আমাদের চোখে যে ধরনের অবয়ব ভেসে ওঠে, হুমায়ুন ফরীদি সেটা ভেঙে দিয়েছিলেন। সৌন্দর্য যে শুধু বাহ্যিক অবয়বের ওপর নির্ভর করে না, সেই ধারণা তাঁকে দেখেই পোক্ত হয়েছিল।
বিটিভিতে সেলিম আল দীনের লেখা ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ ধারাবাহিক নাটকে সেরাজ তালুকদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ছিলেন খলনায়ক, কিন্তু পুরো নাটকটির নিশ্বাস-প্রশ্বাস যেন তিনিই। ‘আমি তো জমি কিনি না, ফানি (পানি) কিনি’ সংলাপটি ছিল তখন সবার মুখে মুখে।
অভিনয়ের ব্যাপারে ফরীদি কতটা মনোযোগী ছিলেন, তার দু-একটি উদাহরণ দিই। ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নামে টেলিভিশনে একটা নাটক হচ্ছিল। প্রযোজক আতিকুল হক চৌধুরী। নাটকের মূল চরিত্রের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন হুমায়ুন ফরীদিকে। কিন্তু নাটকটি পড়ার পর ফরীদি জানিয়ে দিলেন, তিনি মূল চরিত্রে অভিনয় করবেন না। করবেন মোটে এক সিনে থাকা এক বিপ্লবী ছেলের চরিত্রে। প্রযোজক তাতে রাজি হতে বাধ্য হলেন। কিন্তু টেলিভিশনে অভিনয় করতে হলে তো অডিশন দিতে হয়। ফরীদি অডিশন দিতে গেলেন না। এ কথা বলাই যায়, হুমায়ুন ফরীদি হচ্ছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম অডিশন ছাড়া শিল্পী।
দাড়ি-টুপি-লুঙ্গি পরা সেরাজ তালুকদার তখন প্রবল জনপ্রিয়। এ রকম সময়ে একই ধরনের চরিত্রে বারবার অভিনয়ের অফার আসতে থাকে। তাতে একজন অভিনেতা একঘেয়ে হয়ে যেতে থাকেন। ফরীদি সেটা জানতেন। তাই পরের কয়েক বছর তিনি আর লুঙ্গি পরে অভিনয়ই করেননি।
ষাট বছর হলো যখন, তখন তিনি বললেন, ‘চল্লিশে জীবন নতুন করে শুরু হয়। ষাটে জীবনটা আরও সুন্দর হয়। ওটা আরও সুন্দর হবে যদি মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবুক না থাকে। এগুলো মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমকে নষ্ট করে দেয়।’
ফরীদি নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়তেন অভিনয়ের ছয়-সাত দিন আগে থেকে। তারপর তা মাথার মধ্যে বুনতে থাকতেন। ফলে তিনি আর ফরীদি থাকতেন না, হয়ে যেতেন চরিত্রটির মতো।
সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, চোখের আলোয়, পৃষ্ঠা ৮৪-৮৭