আলী আকবর জন্মেছিলেন সহজাত প্রতিভা নিয়েই। কিন্তু খুব চঞ্চল ছিলেন। বাজনায় হাত পাকানোর চেয়ে খেলাধুলা আর গান শুনতে পছন্দ করতেন। বাবা আলাউদ্দিন খাঁ বুঝতেন না, ছেলে ফাঁকি দিচ্ছেন। আলাউদ্দিন খাঁ যখন বাজার থেকে বাড়ি ফিরতেন, তখন সেটা টের পেয়ে গ্লাসে পানি নিয়ে আলী আকবর কপালে, শরীরে লাগাতেন, ভাব দেখাতেন, সংগীত সাধনা করতে করতে ঘাম ছুটে গেছে।
আলাউদ্দিন খাঁ সরোদ ধরিয়েছিলেন ছেলেকে তিন-চার বছর বয়স থেকেই। কিন্তু ফাঁকিবাজ ছেলেটি ফাঁকি দিয়েই যাচ্ছিলেন। ১৯৩৫ সালের শেষের দিকে আলাউদ্দিন খাঁ উদয়শঙ্করের ট্রুপে বিদেশ গিয়েছিলেন। তিনি যখন ইংল্যান্ডের ডেভনশায়ারের প্রান্তে, তখন মাইহারের দেওয়ানের কাছ থেকে পেলেন এক চিঠি। আলী আকবর বাজনার রেওয়াজে বসতে চান না, খেলাধুলায় আগ্রহ বেশি, এসব ছিল চিঠিতে। খুব চিন্তিত হয়ে খাঁ সাহেব ট্রুপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া বাতিল করে ফিরে এলেন মাইহারে। এরপর আলী আকবরকে হাতের কাছে পেয়েই শুরু করলেন মারধর। আলী আকবর তখন গ্রামোফোন কিনে মালিকা মোখরাজ, সাইগলের গান শুনছিলেন। খাঁ সাহেব একবার গাছের সঙ্গে বাঁধলেন ছেলেকে, উপোস রাখলেন। দুই ঘণ্টা পর পর গিয়ে বেত দিয়ে পেটালেন। ঘণ্টা চারেকের বেশি ঘুমুতে দিলেন না। তাতেই সোজা হয়ে গেলেন আলী আকবর।
রেওয়াজ শুরু হলো বাপ-বেটায়। সরোদ যেন প্রাণ পেল আলী আকবরের হাতে। ট্যুর সেরে বাড়ি ফিরলেন যখন, তখন রবিশঙ্কর এলেন খাঁ সাহেবের কাছে তালিম নিতে। এসে দেখেন বাবা তত দিনে ছেলের হাতকে সোনার হাতে পরিণত করেছেন। সুরেলা সে হাত। বাঘের মতো তৈরি হয়েছে সে তখন।
আলাউদ্দিন খাঁর কোমল মূর্তি আগে দেখেছেন রবিশঙ্কর। তালিম নিতে এসে দেখলেন তাঁর রণমূর্তিও। বকুনি আর ঠ্যাঙানি খেয়ে শাগরেদেরা পালাত। কিন্তু যাঁরা আলাউদ্দিন খাঁর কাছে টিকে যেতেন, তাঁরা বুঝতেন এই সাধনা আর চর্চার অর্থ।
সূত্র: রবিশঙ্কর, রাগ অনুরাগ, পৃষ্ঠা ২০৭-২০৯