আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। তাদের জীবন চলার পাথেয় হিসেবে ইতিহাসের নানান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি ঘটেছে। ধর্মীয় বৈচিত্র্যের এ পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ পারস্পরিক সুসম্পর্ক, ঘনিষ্ঠতা ও সম্প্রীতির বাঁধনকে পবিত্র কোরআনের নিম্নোক্ত বাণীতে ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যিক মহিমার আলোকে উদ্ভাসিত দেখতে পাবেন। যেখানে মহান প্রভু বলছেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ (হজরত আদম আ.) ও এক নারী (হজরত হাওয়া আ.) থেকে। এরপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। (সুরা-৪৯: হুজুরাত, আয়াত: ১৩)
বিভিন্ন জাতি-ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সার্বিক সম্পর্কোন্নয়ন, শৃঙ্খলা, সাম্য-মৈত্রী ও ঐক্য-সম্প্রীতির ভিত রচনায় এটি এক অনুপম ও মাধুর্যপূর্ণ বিবৃতি; যাকে উপজীব্য করে সমাজের সকল ধর্মমতের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) তাঁর উদারনৈতিক ও মানবতাবাদী চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে হিলফুল ফুজুল বা শান্তিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেছেন। মদিনা সনদ তথা মানবেতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেছেন; যা শুধু মুসলমানের জন্য নয়, সব মানুষের জন্যই অনুসরণযোগ্য। হুদায়বিয়ার সন্ধি স্থাপন করেছেন, যা বাহ্যত এক অসম চুক্তি মনে হলেও পবিত্র কোরআনে তা ফাতহুম মুবিন তথা সুস্পষ্ট বিজয় বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি। এসব ঘটনা পর্যালোচনা করলে সর্বত্রই দেখা যাবে অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী ও ধর্মীয় সম্প্রীতিময় এক সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।
ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন: অধ্যাপক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়