কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য একজন ভারতীয় বাঙালি লোকসংগীত শিল্পী এবং লোকসংগীত গবেষক। তিনি আসামের শিলচরে জন্মগ্রহণ করেন। শিলচরের ভট্টাচার্য বাড়িই তাঁর সংগীতজীবনের প্রাথমিক পাঠ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। তাঁর সংগীতের অনুপ্রেরণা ছিলেন কাকা অনন্ত ভট্টাচার্য। তবলা বাজানোর মধ্য দিয়ে তাঁর সংগীতজীবনের শুরু। তবলার পরে ধাপে ধাপে অন্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখেন। তিনি কণ্ঠ সংগীতেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এরপর তিনি ভারতের উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপরই ঐতিহ্যবাহী লোকগানের সন্ধান শুরু করেন, যা ছিল অনেকের অচেনা ও অজ্ঞাত। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করে সংগীতজীবনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।
১৯৯৮ সালে ‘ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশন অব দ্য আর্টস’ থেকে শিল্প লোকসংগীতের ওপর গবেষণার জন্য বৃত্তি নিয়ে বেঙ্গালুরুতে চলে যান। ১৯৯৯ সালে তিনি পল্লিগান ও লোকায়ত গানের ঐতিহ্যকে পুনর্জাগরণের উদ্দেশ্যে লোকগানের ব্যান্ড ‘দোহার’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত দোহারের উপস্থাপনা ছিল স্বতন্ত্র। তাঁর গানগুলো একই সঙ্গে গবেষণাময় ও আনন্দময় ছিল।
আসাম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের সিলেটি গান‚ বিহু‚ বাউল, কামরূপী‚ ভাওয়াইয়া প্রভৃতি গান তিনি গেয়েছিলেন। প্লেব্যাক করেছিলেন হিন্দি ও বাংলা চলচ্চিত্রে। অশোক বিশ্বনাথের পরিচালিত হিন্দি চলচ্চিত্র ‘গুমশুদাতে’ তাঁর গাওয়া গান ছিল। ২০০৭ সালে তিনি সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র ‘চতুরঙ্গ’র জন্য গান গেয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি বাংলা চলচ্চিত্র ‘মনের মানুষের’ জন্য গান গেয়েছিলেন, যা গৌতম ঘোষ পরিচালিত ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টা ছিল। এটি ফকির লালন শাহের জীবন ও দর্শন নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র। সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত ‘জাতিস্মর’ চলচ্চিত্রে তিনি গান গেয়েছিলেন। তিনি তাঁর শেষ গান গেয়েছিলেন ‘ভুবন মাঝি’ চলচ্চিত্রে।
২০১৭ সালের ৭ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের হুগলির গুরাপ গ্রামের কাছে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য।