দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মানুষের চলাচলে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলে কেনাকাটা কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা পেতে অনলাইননির্ভরতা বেড়ে যায়। এ সুযোগে লকডাউনে ঘরবন্দী মানুষের কাছে নিত্যপণ্যসহ খাবার, ওষুধ, পোশাক পৌঁছে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।
তাদের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয় চমকপ্রদ নানা অফার। এর ফলে গ্রাহকের দিক থেকেও আগাম বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে যায়। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও ই-কমার্সে ঢুকে পড়ে। তাঁরা লোভের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা হারিয়ে হতাশ গ্রাহকদের অনেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও করেন। আবার অসাধুদের কারণে সৎ ব্যবসায়ীরাও আস্থার সংকটে পড়েন। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষেরই আশা-নিরাশায় কেটেছে পুরো বছর।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের একটি অংশ প্রতিকার চায় আদালতে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে নামকরা কিছু প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং চেয়ারম্যানকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন বিদেশে। এসব নেতিবাচক অভিজ্ঞতা ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে ই-কমার্স সাইটের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। ই-ক্যাবের সঙ্গে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান মাত্র ৫১৩টি। আর ই-কমার্সের আনুমানিক বাজার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির হিসেব তলব করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক আকর্ষণে অস্বাভাবিক অফার দেয়। পরে দেখা যায়, অগ্রিম অর্থ নিলেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তারা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করেনি। এতে কমে যায় মানুষের আস্থা।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই দেশে অসাধু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম মাথাচাড়া দিয়েছে। এত বড় একটি শিল্পের ওপর নজর রাখার জন্য শুধুমাত্র একটি সেল রয়েছে, যা যথেষ্ট নয়।’