রাষ্ট্রের কাছ থেকে চিকিৎসা পাওয়া যেকোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ জনগণ এ অধিকার থেকে বঞ্চিত। সরকারি হাসপাতালে কম খরচে চিকিৎসা পাওয়া যায় বলে জনগণ এসব হাসপাতালে যায়। কিন্তু তারা সেখানে গিয়ে যথার্থ চিকিৎসা পায় না। ঢাকায় বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল আছে। তার মধ্যে চারটি বিশেষায়িত হাসপাতালের করুণ চিত্র নিয়ে আজকের পত্রিকায় গত মঙ্গলবার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট (এনআইকেডিইউ), জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল (এনআইসিভিডি) ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, সেবার ঘাটতি নিয়ে রোগীদের অসন্তুষ্টির কথা জানা গেছে। এসব হাসপাতালের মূল সমস্যা হলো লোকবলের সংকট। এই সংকটের কারণে অব্যবস্থাপনা দেখা দিচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে সিটের বহুগুণ বেশি রোগী ভর্তি হয়। এ কারণে চিকিৎসকেরা ভালোভাবে চিকিৎসা দিতে পারেন না। এর বাইরে প্রয়োজনীয় রোগনির্ণয়যন্ত্র, অন্যান্য সরঞ্জাম, ওষুধপত্রের অভাব আছে। হাসপাতালগুলোর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এককভাবে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ, কোনো সরকারই দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসাসেবার সুযোগ সম্প্রসারিত করেনি। যদি মোট জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি রেখে হাসপাতাল নির্মাণ করা হতো, তাহলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও লোকবলের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। সরকারিভাবে যে পরিমাণ ওষুধ দেওয়া হয়, তা রোগীর তুলনায় খুবই নগণ্য। রোগীর তুলনায় রোগ পরীক্ষার যন্ত্রেরও অভাব আছে।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অপ্রতুলতার কারণে দিন দিন বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। এসব হাসপাতালে যেতে পারে শুধু উচ্চবিত্তের লোকজন, সেখানে গরিবের যাওয়ার সামর্থ্য নেই। চিকিৎসা হলো সেবার বিষয়। এটা কোনো পণ্য নয়। কিন্তু আমাদের দেশে চিকিৎসাও পণ্য হয়ে গেছে। এর সঙ্গে আছে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি।
সরকারি হাসপাতালে সিট পেতে, পরীক্ষা করতে ঘুষ দিতে হয়। এসব কাজে হাসপাতালের কর্মচারীরা জড়িত। দালালের দৌরাত্ম্যও আছে। শুধু হাসপাতাল নয়, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার মান নির্ভর করে সে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনার ওপর। যেহেতু হাসপাতাল একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি এবং জীবন রক্ষায় নিয়োজিত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, তাই হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য খাত আর দশটি খাতের মতো নয়। একটি হাসপাতালের অনিয়ম বহু মানুষের জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ, একটি হাসপাতালে যথেষ্ট যন্ত্র না থাকলে সঠিক রোগ পরীক্ষা করা কখনো সম্ভব না। এতে রোগীর মৃত্যুই শুধু ত্বরান্বিত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টর সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ জন্য তারা কমিশন গঠন করেছে। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। তাতে সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালের রুগ্ণ দশার পরিবর্তন হতে পারে।